গা’জায় নষ্ট আটার পচা রুটি খাচ্ছেন মানুষ

ইসরাইলি অবরোধে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে গাজায়। ঘরে ঘরে ক্ষুধায় কাতর মানুষ; অথচ খাবার নেই। বাজারগুলো খালি পড়ে আছে ফাঁকা মাঠের মতো। মাঝে মাঝে যা পাওয়া যাচ্ছে তা সবই পোকামাকড়ে ভরা—দুর্গন্ধযুক্ত।

তবুও সেগুলোই কিনতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। নাকে হাত দিয়ে খাচ্ছেও সবাই—উপায় নেই। কারণ দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে গাজা। খাবার সংকট এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে,

স্বাস্থ্যঝুঁকি সত্ত্বেও ক্ষুধা নিবারণের জন্য নষ্ট আটার পচা রুটিই খাচ্ছে গাজার মানুষ। এটি এমন এক বাস্তবতা যেখানে আর কোনো পথ খোলা নেই। আল-জাজিরা।

গাজার আল-সাহাবা বাজারে এক ব্যাগ আটা কিনেছিলেন আহমেদ ডালুল। কিন্তু তা ছিল পোকামাকড়ে ভরা। বিক্রেতা ব্যাগটি খুলে দেখাতে অস্বীকার করায় ডালুল কোনো উপায় না পেয়ে তা কিনতে বাধ্য হন। কিন্তু ঘরে ফিরে নষ্ট আটা দেখে তা ফেরত দিতে গেলে তা নিতে অস্বীকৃতি জানান ওই বিক্রেতা। ডালুল বলেছেন, ‘গন্ধটি অসহনীয় ছিল। আমার সন্তানরা আবারও এই ধরনের বিষ খাবে তা আমি সহ্য করতে পারছি না।’

এমন পরিস্থিতি গাজার প্রতিটি বাড়িতেই ঘটছে। ৫০ বছর বয়সি জিহান আসলিমও স্থানীয় বেকারি থেকে রুটি কিনে তা খাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রুটির অবস্থা এমন ছিল যে তা খাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। তিনি দুঃখ করে বলেছেন, ‘বাজারগুলো পচা আটা দিয়ে ভরে গেছে। তবুও বিক্রি হচ্ছে অকল্পনীয় দামে। অথচ আমাদের আর কোনো বিকল্পও নেই।’

অনেক পরিবার রুটির গন্ধ কমাতে তা ভিনেগারে চুবিয়ে রেখে তা খাচ্ছেন। ৬০ বছর বয়সি ইউসরা হামাদা তিক্ততার সঙ্গে বলেছেন, ‘শুধু পেট ভরানোর জন্য এই বিষাক্ত খাবার বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’

মার্চের শুরুতে ইসরাইলের নির্দেশে গাজার সীমান্তগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ায় উপত্যকাটি দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান জোনাথন হুইটল। তিনি জানিয়েছেন, ‘ইসরাইলের পূর্ণ অবরোধ গাজাকে ঠেলে দিয়েছে এক শেষ হয়ে যাওয়া বাস্তবতার দিকে। ঠেলে দিচ্ছে পূর্ণ মাত্রার দুর্ভিক্ষের দিকে। দুই মাস ধরে চলা এই অবরোধে খাদ্য, পানি ও ওষুধ প্রবেশ একপ্রকার বন্ধ। যা গাজাবাসীর জন্য অসীম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে গাজার শেষ বেকারিটিও ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া ইসরাইলি নির্দেশে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডাব্লিউসিকে) মোবাইল বেকারিটিও খান ইউনুস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে এটি নতুন একটি স্থানে চলে গেছে। বর্তমানে দিনে ১৯ ঘণ্টা কাজ করে মাত্র ৫৯ হাজার রুটি তৈরি করে যা গাজার প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সামান্য। ওসিএইচএর প্রধান শাদি জানিয়েছেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব রুটি তৈরির চেষ্টা করছি। তবে আটা সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন সীমিত।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *