
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) নিয়োগ পেতে জীবনবৃত্তান্তে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে জোরপূর্বক ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়, সায়মা ওয়াজেদ ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেতে জীবনবৃত্তান্তে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করেন।
২০২৩ সালে ডব্লিউএইচওতে জমা দেওয়া তার সিভিতে উল্লেখ করা হয়, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতা এবং শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, তিনি এই ধরনের কোনো কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।
এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে সায়মা ওয়াজেদ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যা সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ পান। এরপরও ২০২৩ সালে সিভিতে তিনি নিজেকে বিএসএমএমইউর “অনারারি স্পেশালিস্ট” হিসেবে উল্লেখ করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর পাঠানো চিঠির জবাবে জানানো হয়, সায়মা ওয়াজেদ বিএসএমএমইউতে কোনো শিক্ষকতা, শিক্ষা ম্যানুয়েল প্রস্তুতি বা পর্যালোচনা কাজে যুক্ত ছিলেন না। ফলে জাল তথ্য দিয়ে তিনি ডব্লিউএইচও পদে নিয়োগ লাভ করেছেন বলে দুদকের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংকগুলোকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সিএসআর (করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) তহবিল থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বাধ্য করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মে মাসে ১৭টি ব্যাংক থেকে প্রথম দফায় ২১ কোটি টাকা এবং পরে মোট ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে জমা দিতে বাধ্য করা হয়।
দুদক বলছে, প্রধান কার্যালয় থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় অভিযান চালিয়ে কোনো অফিস বা কার্যক্রমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কোনো বৈধ রেকর্ডপত্রও পাওয়া যায়নি। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আদায়কৃত অর্থ ভুয়া নথি তৈরি করে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা মামলার তদন্তে বিশদভাবে খতিয়ে দেখা হবে।