
ভারতের উত্তরপ্রদেশে প্রকাশ্যে জোরপূর্বক হিজাব খুলে মুসলিম তরুণীকে হেনস্থার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা হিন্দু পুরুষ সঙ্গীকেও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, তরুণীকে হেনস্থার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
২০ বছর বয়সি তরুণীর নাম ফারহিন, তিনি স্থানীয় খালপাড় এলাকার বাসিন্দা। শচীন নামে একব্যক্তি ঋণের কিস্তি তুলতে যাচ্ছিলেন। পথে, ৮-১০ জন পুরুষের একটি দল তাদের ঘিরে ধরে। এরপরই ফারহিন ও শচীনকে লাঞ্ছিত এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এক তরুণীকে ঘিরে ধরেছে কয়েকজন পুরুষ। তারা তরুণীকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের মন্তব্য করছে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করছে। ভিড়ের মধ্যে পড়ে অসহায় তরুণী আর্তনাদ করছেন। অল্পবিস্তর ধাক্কাধাক্কি চলছে।
পুরো ঘটনাটি একজন পথচারী মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন এবং পরে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এবং দুজনকে নিরাপদে থানায় নিয়ে যায়। ফারহিনের অভিযোগ দায়েরের পর ভারতীয় ন্যায় সংহিতার প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ই এপ্রিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয় পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হেনস্থার শিকার তরুণীর মা জানান, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছেন তার মেয়ে। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তিনি। আমার মেয়ের সঙ্গে কী কী হয়েছে, আপনারা নিশ্চয়ই তা ভিডিওতে দেখেছেন। ও আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এখনও বিয়ে হয়নি আমার মেয়ের। ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে খুবই আতঙ্কে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তাদের পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে ফারহিনের মা বলেন, আমার ছয় সন্তান। তাদের মধ্যে পাঁচজন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। আমার স্বামী আট বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাই সংসারের সব খরচ আমাদেরই চালাতে হয়।
গত কয়েক মাস ধরে তার সঙ্গে ব্যাংকে কাজ করছেন শচীন নামে ওই ব্যক্তি। ওইদিন তার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কাজে যান শচীন। তারপরই এ ঘটনা ঘটে।
ডিএসপি রাজু কুমার সাও জানিয়েছেন, ভিডিও দেখে বাকি অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে এবং তাদেরও শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১৫ (২), ৩৫২, ১৯১ (২) এবং ৭৪ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ ধারাগুলোয় মারধর, গালিগালাজ করা, দাঙ্গা ও শ্লীলতাহানি সম্পর্কিত অপরাধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও জানান ডিএসপি।