ভারতের ৫০০০ কোটি রুপি বন্ধ, বাংলাদেশকে পাশ কাটিয়ে সেভেন সিস্টার্সে রেলের নতুন কৌশল

বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা আপাতত স্থগিত করেছে ভারত। প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে বাস্তবায়নযোগ্য

এই প্রকল্প বাতিলের কারণ হিসেবে ভারত “রাজনৈতিক অস্থিরতা” ও “শ্রমিকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি”-র কথা উল্লেখ করেছে।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস লাইন সূত্রে জানা যায়, এ সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত তিনটি চলমান

প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা বড় ধাক্কা খেয়েছে।

স্থগিত হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ ও কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ নির্মাণ, খুলনা-মোংলা বন্দর রেল সংযোগ এবং ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প। আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের দৈর্ঘ্য

১২.২৪ কিমি, যার মধ্যে ৬.৭৮ কিমি বাংলাদেশে এবং ৫.৪৬ কিমি ত্রিপুরায় অবস্থিত। প্রকল্পটি ভারতের প্রায় ৪০০ কোটি রুপি সাহায্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনটি আসামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে নির্মাণাধীন ছিল।

খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ প্রকল্পটির বাজেট ৩৮৮.৯২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৩০০ কোটি রুপি) এবং এর আওতায় ৬৫ কিমি প্রশস্ত গেজ রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, যা মোংলা বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনতে সহায়ক হতো।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর প্রকল্পটি ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হয়নি। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে ১৬০০ কোটি রুপির এই প্রকল্পও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমরা বাংলাদেশে কোনো নির্মাণসামগ্রী পাঠাচ্ছি না এবং প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নও বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ এসব রুট পাশের দেশের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি জানান, ভারতের অংশে নির্মাণকাজ যথারীতি চলমান রয়েছে।

এরই মধ্যে ভারত বিকল্প রেল সংযোগ স্থাপনের দিকে নজর দিয়েছে। এখন তারা ভুটান ও নেপাল হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কৌশল নিয়ে কাজ করছে। নেপালের বিরাটনগর থেকে নিউ মাল পর্যন্ত ১৯০ কিমি এবং গলগালিয়া থেকে ভদ্রপুর হয়ে কাজলি বাজার পর্যন্ত ১২.৫ কিমি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের কুমেদপুর থেকে অম্বরী ফালাকাটা পর্যন্ত ১৭০ কিমি এবং বিহার সীমান্তে ২৫ কিমি নতুন রেলপথ তৈরির চিন্তাভাবনাও চলছে।

২০২৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রেল সংযোগ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিলিগুড়ি করিডোর বা ‘চিকেন নেক’ নামক সরু পথের ওপর নির্ভরতা কমানো। তবে বর্তমান সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের এখন এই করিডোরের বিকল্প খুঁজে বের করার চাপ আরও বেড়ে গেছে।

সূত্র:https://youtu.be/rO3WMeD34TY?si=BOj5UY2YUjgoR3Gq

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *