
কুটনৈতিক চমক দেখালেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, চীনের মধ্যস্ততা ও আন্তর্জাতিক চাপে রোহিঙ্গাদের
ফেরত পাঠানোর ইস্যুতে দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেল সেই চিত্র। মিয়ানমারের উপর প্রধানমন্ত্রীর মুখে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি মিলল যে,
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কী এমন হলো
এখন যেখানে বারবার সংলাপ আলোচনা করেও বিগত সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ড. ইউনূস কীভাবে ঘটালেন এই অগ্রগতি?
থাইল্যান্ডে গত ৪ মার্চ, শুক্রবার বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের অবসরে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মিয়ানমারের উপর প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উথানশিউ।
সেই বৈঠকে জান্তা সরকারের প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের একটি অংশের যাচাই সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায়। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মিয়ানমারকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ওই তালিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে আরো ৭০ হাজার রোহিঙ্গার ভেরিফিকেশন। এদের বাইরে বাকি ৫ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার কার্যক্রম দ্রুতগতি পাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুই দেশের আলোচনায় রোহিঙ্গাদের দেখে ফেরার পথ খুলছে এমন খবরে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে না গুঞ্জন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জান্তা সরকারের রোহিঙ্গা স্বীকৃতির পেছনে কূটনৈতিক কৌশল, চাপ কিংবা চুক্তির চেয়ে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা ও শক্তিশালী যোগাযোগ।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দুইবার প্রত্যাবাসন চুক্তি, চীনের মধ্যস্ততা ও জাতিসংঘের প্রস্তাব সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী হয়েছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে পারে নি রাখাইনে। মিয়ানমার বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের ফলে একবারে প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অর্জন। অবশ্য এখনই কোনো উপসংহারে পৌঁছানো উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত মন্তব্যে তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মূল আবাসভূমি রাখাইন এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। সেখানে জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে না। চীনে দায়িত্ব পালন করা এই কূটনীতিক মনে করেন ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ভবিষ্যতে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করবে।
২০১৭ সালে চীনের মধ্যস্ততায় শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনা। প্রথম ব্যাচ পাঠানোর কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। ২০১৯ সালেও নেওয়া হয় উদ্যোগ। কিন্তু নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা না থাকায় ফেরত যেতে চায় নি রোহিঙ্গারা। ২০২১ সালে মিয়ানমারে শুরু হয় সামরিক অভ্যুত্থান। আরো অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে রাখাইনের পরিস্থিতি। এর জেরে ২০২৩ সালে আবারো রোহিঙ্গা প্রবেশ করে বাংলাদেশে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এখনো দূরের বিষয় হলেও আশা দেখাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্বীকৃতি পাওয়া রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে পারে কি না সেদিকে দৃষ্টি এখন আন্তর্জাতিক মহলের।
সূত্র: https://youtu.be/db_hjnPjtOw?si=95QWZm-A0KL9e8ku