
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে ঈদ উপহার গ্রহণ করায় ঢাকা কলেজ জামে মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিনের তিন মাসের বেতন কর্তন করেছে কলেজ প্রশাসন। তিনি ২৭ বছর ধরে ঢাকা কলেজ জামে মসজিদে খাদেম হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জানা যায়, ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছাড়ার পর নেহাল আহমেদ দুই বছর
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) ছিলেন। তবে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আন্দোলনের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নেহাল আহমেদ সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের ভাগিনা। মাউশির ডিজি থাকা অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের বাসভবনে পরিবার নিয়ে অবস্থান করতেন।
পরে গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে নেহাল আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, “০১/০৮/২০২০ তারিখ শনিবার শেখ কামাল ছাত্রাবাস সন্নিকটে ঢাকা কলেজের ০৩ নম্বর গেটে সংগঠন/বহিরাগতদের নিকট থেকে উপহার
সামগ্রী গ্রহণের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সুপারিশের ভিত্তিতে মো. নিজাম উদ্দিনের তিন মাসের (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২০) বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ছয় মাস তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, “ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা সবসময় আমাদের খোঁজ নেন, মসজিদে আসেন, দেখা হয়। ঈদের সময় উপহার পাঠান। ২০২০ সালেও কোরবানির মাংস পৌঁছে দিয়েছিলেন কলেজ কর্মচারীদের ঘরে। আমি ও মুয়াজ্জিন সাহেবকে দুটি প্যাকেট মাংস দেন তারা। কিছুদিন পর নেহাল স্যারের নির্দেশে আমাকে একটি নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং তিন মাসের বেতন কেটে নেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্রশিবির থেকে কোরবানির মাংস নেওয়ায় কলেজের আরও কয়েকজন স্টাফকেও গালমন্দ করেছিলেন নেহাল স্যার। বিচার চেয়ে অনেকের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু বরং চাকরিচ্যুতির হুমকি পেয়েছি। এখনও তিন মাসের ৩০ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।”
এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, “প্রতিবছরই আমরা কলেজ স্টাফ, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সম্মানে কোরবানি দিই এবং দায়িত্বশীলরা তাদের ঘরে মাংস পৌঁছে দেন। খাদেম সাহেবের বেতন কেটে নেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা দ্রুত বর্তমান কলেজ প্রশাসনের কাছে তার কেটে নেওয়া বেতন ফেরত দেওয়ার দাবি জানাই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, “কোরবানির মাংস নেওয়ার কারণে মসজিদ খাদেমের বেতন কেটে নেওয়ার ঘটনা শুনেছি। কলেজ বর্তমানে ঈদের ছুটিতে রয়েছে। ক্যাম্পাস খোলার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখব। দেনাপাওনা থাকলে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, বর্তমানে ঢাকা কলেজ জামে মসজিদের খাদেম মো. নিজাম উদ্দিন ১১ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।