বাংলাদেশে র’ এর সি’ক্রেট কি’লিং মিশন আ’তঙ্ক?

বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কের নাম ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)’। বিগত ১৫ বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল সংস্থাটি।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ‘র’-কে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ফলে ভারতের আধিপত্য অনেকাংশে দুর্বল হয়েছে।

তবুও থেমে নেই ষড়যন্ত্র—অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে নতুন পরিকল্পনায় কাজ করছে ‘র’।

‘র’-এর গোপন মিশন ও টার্গেট কিলিংয়ের আশঙ্কা
সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের চাঞ্চল্যকর এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এমন কিছু ব্যক্তি প্রবেশ করেছেন,

যারা চান না বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হোক বা রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসুক। তার অভিযোগ, এই গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকেও অস্থিতিশীল করতে চাইছে।

তিনি আরও বলেন, “এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।” তার পোস্টে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে ‘র’-এর নয়জন মূল ইনসাইডার রয়েছেন—তবে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

‘র’-এর মাধ্যমে আন্দোলনের নামে অস্থিরতা?
সম্প্রতি ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নেমেছে গণজাগরণ মঞ্চের কিছু সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই মঞ্চের গঠনে ‘র’-এর প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। যদিও ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গণজাগরণ মঞ্চের পুনরুত্থান ঠেকানো হয়।

এদিকে, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনসহ কয়েকজনের হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি নতুন করে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। অসমর্থিত সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয় এজেন্টরা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।

‘র’-এর বাংলাদেশে প্রবেশ ও তৎপরতা
এর আগে জানুয়ারিতে জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ‘র’-এর দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসেন। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। তবে, আগের সরকারের মতো আন্তরিক অভ্যর্থনা এবার তারা পাননি।

ফেব্রুয়ারিতে তিনি দাবি করেন, ‘র’-এর আরেকটি দল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই এজেন্টরাই টার্গেট কিলিং মিশন চালাতে পারে। যদিও নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এখনো এ ধরনের তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।

৪৫ হাজার আওয়ামী কর্মী ভারতে, বিজেপির রাজনীতি?
জুলকারনাইন সায়ের তার এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, ভারতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি কি কলকাতাকে অস্থিতিশীল করতে বাংলাদেশি নেতাদের ব্যবহার করছে?

এছাড়া, তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই কারণেই কি ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান সীমিত করেছে?

জুলকারনাইন সায়ের আরও দাবি করেন, “All the Prime Minister’s Men” প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে তিনটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সতর্ক থাকার আহ্বান
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘র’-এর গোপন তৎপরতা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *