জামায়াত আমির ও নাহিদ ইসলামের সেই ‘ভাইরাল ছবি’ নিয়ে যা জানা গেল

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের চুম্বনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ছবির এ দৃশ্য এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বলে ‘রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ গ্রুপ’ থেকে দাবি করা হয়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে ওই দৃশ্যের মতো কোনো কিছু ঘটেনি। এছাড়াও, নাহিদ ইসলামের হাতে ওই অনুষ্ঠানে ঘড়ি না থাকলেও এই ছবিতে ঘড়ি দেখা যায়, তার পাঞ্জাবির কাফ-এ এমব্রয়ডারি করা থাকলেও ওই ছবিতে সেটি নেই।

রিউমর স্ক্যানার টিমের দাবি
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এনসিপির ইফতার মাহফিলে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চুম্বনের ভাইরাল দৃশ্যটি বাস্তব নয়। বরং, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই দৃশ্যতে এআই-জনিত একাধিক অসংগতি পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া, সেদিনের অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি পর্যালোচনায়ও এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ মেলেনি।

বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে রিউমর স্ক্যানার টিম এনসিপির আয়োজিত ইফতার মাহফিলের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও প্রতিবেদন ছাড়াও, মাহফিলে উপস্থিত ব্যক্তিদের ফেসবুকে শেয়ার করা ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়। তবে কোথাও এমন কোনো দৃশ্যের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এমন দৃশ্যের প্রমাণ না পাওয়ায় রিউমর স্ক্যানার টিম ভাইরাল ছবিটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে। পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়ে, যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায়।

প্রথমত, ছবিতে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমান—দুজনের হাতেই ঘড়ি দেখা যায়। তবে সেদিনের একাধিক ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাহিদ ইসলামের হাতে কোনো ঘড়ি ছিল না। দ্বিতীয়ত, ছবিতে শফিকুর রহমানের বাম হাতে একটি আংটি দেখা গেলেও ইফতার মাহফিলের ছবি পর্যবেক্ষণে তার হাতে কোনো আংটির অস্তিত্ব মেলেনি।

এছাড়া, ছবিতে থাকা দুই ব্যক্তির হাতের গঠনে লক্ষণীয় অসংগতি রয়েছে। তুলনা করে দেখা গেছে, হাতের কিছু বৈশিষ্ট্য নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আংশিক মিলে গেলেও ৬৬ বছর বয়সী শফিকুর রহমানের হাতের সঙ্গে ছবির হাতের কোনো মিল নেই। বরং, ছবিতে থাকা হাত তুলনামূলকভাবে মসৃণ, বলিরেখাহীন এবং তরুণদের হাতের মতো দেখাচ্ছে। সাধারণত ৬৬ বছর বয়সে হাতের চামড়ায় ভাঁজ ও বলিরেখা দেখা যায়, যা সেদিনের ছবি পর্যালোচনায় শফিকুর রহমানের হাতেও প্রতীয়মান হয়েছে।

এসব অসংগতি দেখে রিউমর স্ক্যানার নিশ্চিত হয় যে ছবিটি আলোচিত ইফতার মাহফিলের কোনো ভিডিওর ওপর এআই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে, ‘Chemical Ali’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই চুম্বনরত দৃশ্যের একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে, ‘Muhammad Ferdous Pramanik’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। মূল ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমান কেবল চেয়ার বদল করছিলেন। একই ভিডিও সেদিন দৈনিক ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজ থেকেও প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া, সেদিন নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চেয়ার বদলের পুরো ঘটনার ভিডিও পর্যালোচনা করেও তাদের চুম্বনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, ওই ইফতার মাহফিলের একটি ভিডিও সংগ্রহ করে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদনা করা হয়েছে এবং সেটিই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি একটি ভুয়া ছবি এনসিপির ইফতার মাহফিলে নাহিদ ইসলাম ও শফিকুর রহমানের চুম্বনরত বাস্তব দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *