
সোমবার দুপুর একটা। রমজানের মধ্য দুপুরে রাজধানীর পল্টন মোড়ে অন্য সময়ের মতো গাড়ির জটলা। কিন্তু কে জানত যানজটের মধ্যে বড় বিপদে পড়বেন মায়ের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে রওনা হওয়া সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী সাবিনা (ছদ্মনাম)। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে অনেক কষ্টে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছিলেন বাবা-মা। বাসের জানালার পাশে বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল মেয়েটি। হঠাৎ কল আসায় মোবাইল বের করতেই ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়ে যায়।
শখের মোবাইলটি হারিয়ে মা-মেয়ে যখন পাগলপ্রায় তখন পেছনে আরেকটি বাস থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখছিলেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম। দেবদূতের মতো নেমে এসে ছিনতাইকারীকে ফলো করে আরেকটি বাস থেকে ধরে ফেলেন। উদ্ধার করে দেন মেয়েটির মোবাইলটি।
এরপরই শুরু হয় ছিনতাইকারীকে গণধোলাই। আশপাশের লোকজন, চলতি পথের লোকজন যে যেভাবে পারছেন উত্তম-মাধ্যম দিতে থাকেন মোবাইল নেয়া যুবককে। পরে পল্টন মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশ এসে ছিনতাইকারী উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছিনতাইয়ের শিকার মেয়েটি মাকে নিয়ে নিউমার্কেট যাচ্ছিলেন। হেডফোনে কথা বললেও হঠাৎ ফোন আসায় ব্যাগ থেকে মোবাইলটি বের করা মাত্রই ওৎপেতে থাকা ছিনতাইকারী আচমকাই সেটি থাবা দিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে পড়েন মেয়েটির মা। পেছনে বিআরটিসির আরেকটি বাস থেকে ছিনতাইয়ের দৃশ্য দেখে দ্রুত নেমে আসেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আশরাফুল ইসলাম।
ঢাকা মেইলকে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার পুরো চোখটাই কেন যেন সামনের বাসের জানালায় ছিল। যখন দেখলাম মোবাইলটা নিয়ে লোকটা দ্রুত চলে যাচ্ছে তখন আর বসে থাকতে পারলাম না। ফলো করতে করতে দেখি ছিনতাইকারী সামনে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের একটা বাসে উঠে পড়েছে। বাসে উঠে ধরে ফেললাম ওকে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন হারানো মেয়েটির মাও আসেন।
ধরে ফেলার পর ছিনতাইকারী ধারালো একটি জিনিস দিয়ে শরীরে আঘাত করার চেষ্টা করেছে জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ভালো করে আঘাত করতে পারলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেত। আল্লাহ রহমত করেছেন। এরপর আর নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। বাস থেকে নামানোর পর লোকজন গণধোলাই দিয়েছে। পরে পুলিশ এসে তাকে নিয়ে গেছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ছিনতাইকারীকে আমরা উদ্ধার করে পাশে বক্সে আটকে রেখেছি। থানা পুলিশের কাছে দেওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নেবে।
নিশ্চিত খোয়া যাওয়া ফোন ফিরে পেয়ে খুশি হলেও এমন ঘট্নায় বেশ ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও তার মা। তারা বলেন, এমন করে যদি রাস্তায় বের হলে ফোন খোয়া যায় তাহলে আমরা কোথায় যাব? এই ধরনের কাজ যারা করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ফোন উদ্ধার করতে সহযোগিতা করার জন্য আশরাফুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানান ফোন হারানো সেই শিক্ষার্থী ও তার মা।