যে শর্তে হাসিনাকে ফেরত দিবে ভারত! চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো ভারতীয় মিডিয়া

ঘড়ির কাটা সন্ধ্যা ৭ টা প্রায়, দিল্লির লদি স্টেটের একটি অভিজাত বাংলোর সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর প্রহরা। এই বাংলোর ভিতরেই রয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপর থেকেই যেন তার সময় থমকে গেছে।

অন্যদিকে ঢাকায় ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যা যেন স্বস্তি দিচ্ছে না কূটনৈতিকদের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আলো জ্বলছে। টেবিলের উপর খোলা পরে আছে ভারত সরকারের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক নোট। যেখানে বাংলাদেশ স্পষ্টভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে। কিন্ত অনেকদিন পার হয়ে গেলেও দিল্লি থেকে কোন উত্তর আসেনি।

দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। যার সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও বিচারিক দলিল সংযুক্ত করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোঃ রফিকুল আলম জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ভারতকে অনুসন্ধানী দল পাঠিয়ে সমস্ত প্রক্রিয়া সহজ করা হবে।

প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পদক্ষেপ নিয়েছি। ২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি সাক্ষরিত হয়। যা ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়। এর আওতায় দুই দেশ অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মতো উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে৷

আইন বিশেষজ্ঞ ড. সঙ্গীতা ঠাকুর বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রথমে পর্যালোচনা করবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো ভারতের আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় কিনা। এটিকে দ্বৈত অপরাধ নীতি বলা হয়। এছাড়া রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় কারণে কাউকে ফেরত পাঠানো যাবে কিনা সেটিও বিবেচনা করা হবে। প্রাথমিক পর্যালোচনার পর বিষয়টি ভারতের প্রত্যর্পণ আদালতে যাবে।

ড. ঠাকুর মনে করেন, যদি আদালত মনে করে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত তাহলে প্রত্যর্পণ আটকে যেতে পারে৷ এছাড়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিষয়টি নজরে আনতে পারে৷ তারা দাবি করতে পারে, ঢাকায় ফেরানো হলে হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে পারেন।

শেখ হাসিনার হাতেও বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। তিনি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন। যদি তিনি দাবি করতে পারেন যে, বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অন্যায্য বিচার হতে পারে। তাহলে ভারতে দীর্ঘমেয়াদী আশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

দ্য ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দিল্লির জন্য এটি একটি কূটনৈতিক দোটানা। এখানে জটিলতা দুই রকমের।

১) যদি ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠায়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে। তবে এতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।

২) যদি ভারত হাসিনাকে আশ্রয় দেয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হতে পারে। দিল্লির বাংলোর একটি ছোট্ট কক্ষে বসে আছেন শেখ হাসিনা। চারপাশে ছড়ানো খবরের কাগজ। টেলিভিশনের পর্দায় স্ক্রল হয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম।

কিন্ত তার চোখে কোন টেনশন নেই। মুখে এক অদ্ভুত নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি। তিনি জানেন, মোদি তাকে রাখবেই। কারণ ভারত কখনোই চায় না বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকুক। শেখ হাসিনাও জানেন তিনি এখানেই থাকবেন। এখান থেকেই তিনি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *