ফারহান রনিকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন শারমীন বেগম (৪৭)। ফারহানের স্বজনের জায়গাতেই থাকতেন শারমীন ও তার স্বামী-সন্তানরা। পারিবারিকভাবে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। এ অবস্থায় শারমীনকে এভাবে পৈচাশিকভাবে হ’ত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার।
ঘাতক ফারহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তারা। হ’ত্যাকাণ্ডের শিকার শারমীন বেগম উপজেলার হীরাপুর গ্রামের কলোনি এলাকার মো. নুরুল ইসলাম বেপারীর স্ত্রী। ঘটনার দিন ভোরে ওই নারীকে ডেকে নিজবাড়িতে নিয়ে যান ঘাতক ওই যুবক। এরপর হ’ত্যার পর পুড়ে ফেলেন তার মরদেহ।
এ ঘটনায় শারমীন বেগমের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আজ বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় ফারহানকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ জানায়, হ’ত্যাকাণ্ড নিয়ে ফারহান অসংলগ্ন কথা বলছেন।
তিনি বলতে চাইছেন- শারমীন বেগম তাকে তাবিজ করেছেন। তার এক মেয়েকে তিনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। এসব কারণে তিনি এটা করেছেন। স্থানীয়রা জানান, গত কয়দিন ধরে ফারহানের বাবা যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূইয়া বাড়ির বাইরে অবস্থান করছেন।
ফারহান মাদকাসক্ত। একই সঙ্গে তিনি চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত। শারমীন বেগম হ’ত্যাকাণ্ড যেন সব পৈশাচিকতাকে হার মানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পুলিশ সেখানকার একটি পরিত্যক্ত ঘর শারমীনের পোড়া মরদেহ (কয়লা) উদ্ধার করে। তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথাটি উদ্ধার করা হয় পাশের একটি পুকুরের কাছে জমি থেকে। মাথাটিও গর্তে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
ঘাতকের দেওয়া স্বীকারোক্তি মতে উদ্ধার করা হয় হ’ত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি। শারমীনের বড় মেয়ে রুমার দাবি, চুরি করা হাঁস রান্নার জন্য তার মাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। মা হয়ত এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ কারণে ফারহান তাকে হ’ত্যা করেন। আখাউড়া থানার ওসি মে. ছমিউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘাতক ফারহান একেক সময় একেক কথা বলছেন। তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে জ্বলতে থাকা আগুনের কাছাকাছি ঘুরঘুর করছিলেন ফারহান। এতে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে হ’ত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি। একই সঙ্গে মারতে তেড়ে আসেন। পরে স্থানীয়রা দলবদ্ধ হয়ে ওই যুবককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরই মধ্যে পাওয়া যায় পোড়া মানবদেহ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক হ’ত্যার কাহিনী। উদ্ধার করা হয় দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথা।