ডিবি হারুনের ‘সুইস ব্যাংক’ ঠিকাদারের পরিচয় মিললো

পড়াশোনার উদ্দেশ্যে নোয়াখালী থেকে রাজধানীতে আগমন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি নেন। পেটের তাগিদে কাজ করেছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশনাল আইটেম সরবরাহকারী হিসেবেও। ছাত্রজীবনের এক বন্ধু পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হলে তার পরামর্শে নামেন ঠিকাদারি ব্যবসায়। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে। সখ্য বাড়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঙ্গে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০১৬ সালের পর ডিবির হারুন, পনিরুজ্জামান তরুণ ও সাদিক মিলে গড়ে তোলেন ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় বেপজা, বিআইডব্লিউটিএ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, টিসিবি, মডেল মসজিদ নির্মাণ, এলজিইডি, বিডব্লিউবিডি, পিডব্লিউডি, পদ্মা সেতু, এমআরটি প্রকল্প, সিটি করপোরেশনসহ দুটি সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেতে শুরু করেন। ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে কাজ না করে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া ডিবির হারুনের বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ সাদিকের কাছে গচ্ছিত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বহুমুখী এই প্রতারক হলেন এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক। সম্প্রতি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে ৬ কোটি টাকা আদায় চেষ্টার মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু করে একটি জাতীয় গণমাধ্যম। এর মধ্যে দুদকেও অভিযোগ জমা হয়েছে আবু সাদেক ও এসএস গ্রুপের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগের প্রায় সব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সম্প্রতি ক্ষমতার পালাবদলে ভোল পাল্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে কারাগারে পাঠানো হলেও মাত্র তিন দিনেই জামিনে মুক্ত হয়ে যান। এ ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে তার মতো আওয়ামী লীগের দোসররা কীভাবে জামিন পাচ্ছে, তা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে বিবৃতি দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ডিবি অফিসে নিয়ে ৬ কোটি টাকা চাঁদা আদায় চেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের তিন দিনেই জামিনে মুক্ত হয়েছেন সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের সিন্ডিকেটের প্রধান এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক। গণহত্যার মামলার আসামিরা কীভাবে জামিন পাচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে সেটির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাই।’

তবে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর প্রশাসনে তাকে সুরক্ষা দিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরে বাড়ি একজন ডিআইজি। যার সঙ্গে আবু সাদেকের আগে থেকেই ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে গণমাধ্যম।

কারাগার থেকে বের হয়ে আবু সাদেক নিজেকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের লক্ষ্মীপুর জেলার উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে কৃষক দলের জেলা বা মহানগরে দেশের কোথাও উপদেষ্টা বলে কোনো পদ নেই। কোথাও কোনো উপদেষ্টাও নেই। এ বিষয়ে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কৃষক দলের জেলা বা মহানগর বা কোথাও উপদেষ্টা বলে কোনো পদ নেই। আমাদের এসব কমিটিতে কোনো উপদেষ্টা নেই। কেউ উপদেষ্টা পরিচয় দিলে তা ভুয়া।’

দুদকে জমা পড়া অভিযোগে ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ ও এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক সিন্ডিকেটের ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযোগে হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যবসায়ী আবু সাদেকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া আবু সাদেকের ৫ হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ, হুন্ডির মাধ্যমে ও ওভার ইনভয়েস দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাৎ, আমদানির ক্ষেত্রে এসএস কোড পরিবর্তন করে সরকারের অন্তত ১৫০ কোটি টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকির বিষয়েও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করেন আবু সাদেকের সাবেক ব্যবসায়ী অংশীদার ও অপহরণের শিকার ভুক্তভোগী জুলফিকার আলী মল্লিক নামের এক ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের এই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন আবু সাদেক। হারুন ও সাদেক ছাড়াও এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন সাবেক এক অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিবি পুলিশের সাবেক ডিসি (তেজগাঁও) গোলাম সবুর, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, আবু সাদেকের প্রতিষ্ঠান এসএস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান (মাহাবুব), এসএস গ্রুপের লিগ্যাল সহকারী আশিকুর রহমান রুবেল ও আবু সাদেকের সহকারী মো. শামীম।

তথ্য বলছে, হারুন অর রশিদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা আবু সাদেকের ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন হয়েছে। যার বেশিরভাগ অর্থ আবু সাদেকের ব্যাংক হিসাবে, স্ত্রী হালিমা আইরিনের আলাদা প্রতিষ্ঠান খুলে সেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে।

এ ছাড়া আবু সাদেকের বন্ধু ও লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক মো. আবদুর রব শামীমের জিম্মায় লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত ধরিত্রী নামক পেট্রোল পাম্পসহ প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ও আবু সাদেকের ভাগ্নে মো. মশিউর রহমান সোহানের প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে ফুয়াদ নামে আবু সাদেকের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে প্রায় ২৫ কোটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *