যুবলীগ নেত্রী হয়ে গেলেন এফডিসির এমডি: আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের উপসর্গ!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলের কাতারে পড়ে না। তারা নিশ্চিতভাবে এখন একটা সন্ত্রাসী শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আর তাদের সভানেত্রী শেখ হাসিনা একজন জাতিসংঘ স্বীকৃত বর্বর ও গণহত্যাকারী। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করতে চাওয়াও এখন ভয়ংকর অপরাধ বলে মনে করি। নৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে তাদেরকে এখন বয়কট করা বাঞ্ছনীয়। আওয়ামী লীগকে যে বা যারা পুনর্বাসন করার চেষ্টা করবে তাদেরকেও রুখে দিতে হবে আমাদের।

সরাসরি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ঘোষণা কিন্তু কেউ সরাসরি দিবে না, কেউ সরাসরি এসে বলবে না যে নৌকায় ভোট দিন। কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে, সামাজিকভাবে অনেক পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে আসলে পুনর্বাসন করা সম্ভব। যেমন বইমেলায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে বানানো ডাস্টবিন নিয়ে অনেকেই খুব সুশীল্তা দেখিয়েছেন। কিছু কিছু জায়গা আছে যেগুলো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও সেগুলোকে সরাসরি রাজনীতি বলা যায়। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, মিডিয়া। এই জায়গায়গুলো ভয়ংকরভাবে স্পর্শকাতর, এইসব জায়গায় আজীবন আমরা স্বাধীনতা এবং মুক্তচর্চার কথা বলে আসছি। আমরা সবার স্বাধীনতা চাই, সামনেও চাইবো।

কিন্তু কথা হচ্ছে, কৌশলে যদি এই সমস্ত জায়গায় পতিত ফ্যাসিবাদের লোকজনকে বসানো যায় তাহলে কিন্তু সাংস্কৃতিক দিক থেকে ফ্যাসিবাদ পুনর্জাগরণের সুযোগ পাবে। আমরা মুক্তচর্চার পক্ষে অবশ্যই থাকব, কিন্তু যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণহত্যা ও সীমাহীন লুটপাটের সাথে জড়িত তাদেরকে এসব জায়গায় বসতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে হুংকার দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কিছু উপসর্গ আমাদের আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের শঙ্কা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (BFDC) নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মাসুমা রহমান তানির নিয়োগের খবর প্রকাশ পেয়েছে, যিনি শেখ মুজিবকে নিয়ে নির্মিত “চল যাই” চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে পরিচিত।

এছাড়াও তিনি যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, তার স্বামীও একজন যুবলীগ নেতা। এটা আমাদের জন্য খুবই ভয়ংকর একটা খবর। তাহলে কি আমরা সামনে এফডিসিতে শেখ হাসিনাকে নিয়েও সিনেমা দেখব নাকি? এসব রং-তামাশা দেখার জন্য এতগুলো মানুষ জীবন দিলো? আমাদের সরকার তো কোন বিষয়ে কে কী মত দিয়েছে তা ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে চেয়েছেন, তাহলে এগুলোও যুক্ত করা হোক। কাদেরকে কোন পদে নেওয়া হচ্ছে তাদের বিস্তারিত দেওয়া হোক। সরকারি বিভিন্ন কমিশন ও সংস্কার কমিটিতে এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে, যাঁরা অতীতে ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধু যুক্ত হয়ে বললে ভুল হবে সরাসরি এমপি মন্ত্রী উপদেষ্টাদের ডাকা হয়েছে।

এমনকি রাখা হয়েছে ফ্যাসিবাদের পুত্র সন্তান নাতি নাতনীদেরও। মিডিয়া সংস্কার কমিশনেও এমন নাম দেখা গেছে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনের নামও সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফ্যাসিবাদের লোকজনকে নিয়ে যদি সংস্কার করা হয়, তাহলে সেখানে কী সংস্কার হবে তা বুঝতে আমাদের খুব কষ্ট হবে না। এতাও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের উপসর্গই ধরে নিব। বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ক্ষেত্রেও ফ্যাসিবাদী শক্তির সংশ্লিষ্টতা লক্ষ করা গেছে। সেখানেও শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বই লেখা মানুষজন পুরস্কারের তালিকায় আসে। এটি সরকারের আদর্শিক দৃঢ়তার অভাবকে স্পষ্ট করে।

পুরস্কার ঘোষণা করে জনরোষের মুখে আবার তা প্রত্যাহারও করা হয়েছে। বইমেলা আয়োজনেও সরকারের যথেষ্ট আগ্রহের ঘাটতি দেখা গেছে। বইমেলায় অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নানা ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে যা সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ করে। এর আগে আমরা দেখেছি জাতীয় নাগরিক কমিটিকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নিতে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে ফেলতে চান বলেই মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।

আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার নিরিখেই কাজ করবেন, তাঁর উপরে আমাদের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীর তো শেষ নাই। দেশে প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এখনো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছেন। ২০১৮ সালের রাতের ভোটের ডিসিদের ওএসডি করার একটা খবর পাওয়া গেছে। এটা আরো আগে কার্যকর করা উচিত ছিল। সরকারকে বিপাকে ফেলতে নানামুখী ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। আমরা সবাই চাই, এই সরকার বিপদে না পড়ুক। সরকার বিপদে পড়লে দেশ বিপদে পড়বে।

কিন্তু সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায় থেকে যখন আমরা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের গন্ধ পাই তখন তা বড্ড কষ্টকর। বিশেষ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এই অল্প সময়ের মধ্যেই বেশকিছু অসংগতি দেখা দিয়েছে। এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, সংস্কৃতি দিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করার চেষ্টা করতে পারে।

দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ইউনিট একীভূত হয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে এবং এর সমন্বয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছে। আমরা বাকস্বাধীনতা চাই, সংস্কৃতির মুক্তচর্চাও চাই। কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার, গণহত্যাকারীদের যথাযথ বিচার চাই। তাই বিচার শেষ হওয়ার আগে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যেকোনো ক্ষেত্রে এভাবে যে কাউকে বসাতে দেখলেই তা আমরা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হিসেবেই ধরে নিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *