
কেয়ামতের পূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু বিশেষ আলামত প্রকাশের কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আরব উপদ্বীপের মরুভূমির পরিবর্তন, যা মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, কেয়ামতের পূর্বে আরবের মরু অঞ্চলে অতিরিক্ত ঝড়-বৃষ্টি এবং বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। শুষ্ক মরুভূমি একদিন সবুজ অরণ্যে পরিণত হবে, যা একটি মহাকাব্যিক পরিবর্তনকে সূচিত করবে।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না সম্পদের প্রাচুর্য আসবে। এমনকি কোন ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু কেউ নেয়ার মতো পাবে না। আরবের মাঠঘাট তখন চারুনভূমি এবং নদীনালায় পরিণত হবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাদিসে “আরব” বলতে গোটা আরব উপদ্বীপের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, ওমান ইত্যাদি দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলজুড়ে বিশেষ ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যা কেয়ামতের আলামত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গেল বছর নভেম্বরে সৌদি আরবের আল জফ অঞ্চলে বিরল তুষারপাতের ঘটনা ঘটে, যা একেবারে অস্বাভাবিক। তুষারপাতের সঙ্গে মরুভূমির সোনালী বালির ওপর জমে থাকা বরফের ওপর উটের কাফেলা হেঁটে যেতে দেখা যায়। এটি এমন একটি ঘটনা, যা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকেও অবাক করেছে।
এর আগে, জুন মাসে পবিত্র হজের সময় তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে সৌদি আরবে ১৩০০ জনেরও বেশি হজ যাত্রী প্রাণ হারান। এসব বিরূপ আবহাওয়ার ঘটনা এখন অনেকেই কেয়ামতের আলামত হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। এদিকে, মক্কায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরবের পবিত্র নগরীটিতে গত কয়েকদিন যাবত অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর এনসিএম-এর পক্ষ থেকে বেশ কিছু অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে,
বিশেষ করে মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, হাইল সহ উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতে। এছাড়াও, তাইফ, খুরমা, আলকামিল এবং অন্যান্য শহরে বজ্রবৃষ্টি এবং শিলা বৃষ্টির মত বৈরি আবহাওয়া হতে পারে। বন্যা প্রবণ এলাকাগুলোতে যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে কারণে সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জনগণকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।
তাছাড়া, সমুদ্রে চলাচলের জন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে, কারণ বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ৪০ থেকে ৪৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পৌঁছাতে পারে, যা সমুদ্রে উত্তাল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ সব ঘটনাগুলি যে একটি বৃহত্তর সংকেতের দিকে ইঙ্গিত করছে, তা নিশ্চিতভাবেই স্পষ্ট। সময়ের সাথে সাথে আরও বেশি মানুষ এই পরিবেশগত পরিবর্তনগুলোকে কেয়ামতের আলামত হিসেবে গ্রহণ করছেন, যা আমাদের সচেতন থাকার এবং প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।