
* ১৮-২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যে নাহিদের পদত্যাগ
* ৯ পদ চুড়ান্ত মুখপাত্র শামান্তা অথবা উমামা
* মূল দল ঘোষণার আগে ছাত্রদের উইং ঘোষণা
* ২৩/২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার সম্ভাবনা
* শহীদ মিনার থেকে দলের আত্মপ্রকাশ
জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা আসছে। দলগঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা বিশ্বস্ত সূত্রগুলো বলছে, এক দফা আন্দোলনের ঘোষক ও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ইসলাম আগামী ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ করে নতুন দলে যুক্ত হচ্ছেন। তিনি এই দলের আহবায়ক হচ্ছেন এটা প্রায় চুড়ান্ত। সদস্যসচিব হচ্ছেন ডাকসুর নির্যাতিত নেতা আখতার হোসেন।
আগামী ২৩ অথবা ২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার প্রাথমিক তারিখ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৫/২৬ তারিখের বিষয়েও ফোরামে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নাগরিক কমিটির ৭০ জন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জন থেকে ৫১ অথবা ১০০ সদস্যর নাম প্রকাশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সেটি আরও বাড়বে। কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে এই দল ঘোষণা আসবে। জুলাইয়ের দুই হাজার শহীদ পরিবার এবং ৩১ হাজার আহত ব্যাক্তিদের সামনে রেখেই দল ঘোষণা আসবে।
তার আগে আগামী ২০ তারিখ ছাত্রদের অংশ থেকে নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা হতে পারে। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ছাত্রদের নিয়ে শক্তিশালী উইং থাকবে।
নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের নাম কি হতে পারে তা এখনো ঠিক হয়নি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে নাম চুড়ান্ত করা হবে। তার আগে ২০ ফেব্রুয়ারি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ থেকে ছাত্র কমিটি ঘোষণা করা হবে। এদিকে মূল দলে সদস্য সচিব কে হবেন এটা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে আখতার হোসেনকেই সবাই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কিছুটা ক্রাইসিস তৈরি হলে সেটা অনেকটা কেটে গেছে। আখতারের বিষয়ে সবাই সম্মতি প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও সমন্বয়ক মাহিন সরকার, নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা রাফে সালমান রিফাত, আলী আহসান জোনায়েদ ও আরিফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলোতে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত দু’দিন টানা বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক ছাত্রনেতা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন,দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর বিষয়ে অনেক গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন দলের ৯টি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছে। মুখপাত্র পদটি নারীদেরর পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে। সামান্তা শারমিন অথবা উমামা ফাতেমা এ দুইজনের একজন মুখপাত্র চুড়ান্ত হবেন। এছাড়া সংগঠক, মুখ্য সংগঠক , যুগ্ম ইত্যাদি পদগুলোতে কারা আসছেন সেগুলো অত্যান্ত গোপনীয় রাখা হচ্ছে। প্রত্যাকটি মূল পদের সাথে একজন অথবা দুজনকে যুক্ত রাখা হয়েছে। গত ২/৩ দিন গুরুত্বপূর্ণ পদের বিষয়ে কিছু ক্রাইসিস তৈরি হলেও সেটি অনেকটা মিটে গেছে। সবাই এখন দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অনেক চমক থাকবে এই নতুন দলে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলছেন, শহীদ পরিবারের চাওয়া চাহিদা এবং তাদের পরামর্শকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই দলের ঘোষণা আসবে। একই সঙ্গে চব্বিশের আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদের রাখা গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায়। কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের দল ঘোষণার পর জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ কারার প্রাথমিক কর্মসূচী রাখা হয়েছে। এই লংমার্চ চলবে অন্তত ১৫ দিন। ১৫ দিনে পথে পথে কর্মসূচিতে সব দল মতের মানুষের অংশগ্রহণ পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও জানা যাবে। রাজপথে লংমার্চ থেকে উত্তর দেওয়ায়ও সুবিধা হবে।
ছাত্র নেতৃত্বদ্বয় বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই থাকবে। এই প্ল্যাটফর্ম স্ব অবস্থায় থাকবে। যে প্ল্যাটফর্ম থেকে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম প্রেসার গ্রুফ হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে চব্বিশের ছাত্রজনতার সকল হত্যার বিচার বাস্তবায়ন পর্যন্ত এটি কাজ করবে। ইতোমধ্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে দলীয় গঠনতন্ত্র। ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর চেতনার ওপর ভিত্তি করেই সব তৈরি হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি, কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বব্যাপী রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই দলের মূল ভিত্তি দাঁড় করানো হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের চাওয়া চাহিদা থাকবে বেশি অগ্রাধিকার।
Ezoic
নতুন দলে নেতৃত্বে আসছে এমন কয়েকজন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, দুই রাজনৈতিক দলের ওপর দেশের মানুষ অনেকে বিরক্ত। এই দলগুলো নিজেদের সংস্কার করতে পারে না। তরুণদের বেশি অগ্রাধিকার দেন না। যার পেশি শক্তি রয়েছে, অবৈধ পথে সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জনপ্রতিনিধি বানানো হয়। ফলে দেশের জনগণ অধিকার এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। তরুণরা কী চায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রাধিকার দেন না। দলের ভাবনাকেই তারা সব সময় গুরুত্ব দেন। ফলে একটা দল ১৫ বছর অবৈধ ভোটে ক্ষমতায় ছিল আরেকটা দল নিজেদের সংস্কারের জন্য দলে কাউন্সিল পর্যন্ত করেনি। সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করেছেন। নিজ দলের মধ্যে মতামত প্রকাশ, ভোট দেওয়ার রীতি চালু রাখতে পারেননি। তাই তারুণ্যের বড় একটা অংশ হাসিনার পতনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলে ভরসা, আস্থা রাখবেন বলে মনে করছেন তারা। নতুন রাজনৈতিক দলে যারা আসছেন, তারা মনে করছেন, আন্দোলন করে যে ছাত্ররা হাসিনাকে সরাতে পেরেছে, দেশকে দ্বিতীয়বার বিজয় করেছে, এমন তরুণরা কেউ আর পুরনো দলে যাবে না। গত ১৫ বছর একটি দলের শাসনে মানুষ বিরক্ত আরেকটি দলের ব্যর্থতায় মানুষ অতিষ্ঠ। এখন মানুষ তারুণ্য শক্তিকে খুঁজে নেবে।
নাগরিক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের সবারই প্রত্যাশা নাহিদ ভাই পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হোক এর পাশাপাশি সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেন ভাই সবারই পছন্দের। পাশাপাশি নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস ভাই, হাসনাত ভাইসহ আরও অনেকে আলোচনায় রয়েছেন। তবে এ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার মধ্যে রয়েছে। যারা ২৪ এর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন সবারই মতামত নেওয়া হচ্ছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে দল ঘোষণা করা হবে আমরা আশা করছি । আগামী একুশে ফেব্রুয়ারির পর অর্থাৎ ২৫ তারিখের আগে কিংবা পরে দল গঠন হবে।
নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী একুশে ফেব্রুয়ারির পর নতুন দলের যাত্রা শুরু হবে । সবাইকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন হবে। আপাতত নাহিদ ভাই দলের আহবায়ক হচ্ছেন এ বিষয়টা প্রায় চূড়ান্ত । বাকি পথগুলোর বিষয় এখনো ফোরামে আলোচনা চলছে।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা একটা সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা করেছি, আজকেও সাধারণ সভা ছিল। এ বিষয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, দ্রুতই তা ঘোষণা করা হবে। জনগণ প্রত্যাশা করে অভ্যুত্থানের পক্ষে শুধু একটিই দল হবে, যা দেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সূচনা করবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো আদর্শ চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা জনগণের মতামত নিয়ে নিজেদের আদর্শ গড়তে চাই। ২৪ এরপর মানুষের মনে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন হবে।
নতুন ছাত্র সংগঠনের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, “আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সবাই তাদের নিজস্ব সংগঠনে ফিরে গেছেন। কিন্তু এর বাইরে একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী এসেছিল, যারা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাদের তো এখন কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। সেই দিকটা বিবেচনা করেই আমরা একটা ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। “স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট” স্লোগানকে রেখে খুব শীঘ্রই এই ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।