![](https://www.dhakasports.life/wp-content/uploads/2025/02/news-today-212.jpg)
ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গড়ে ওঠা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন নির্যাতনকেন্দ্র (টর্চার সেল) পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজধানীর কচুক্ষেত, উত্তরা,
আগারগাঁও এলাকায় বিগত সরকারের তিনটি গোপন কারাগার পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ও ভুক্তভোগীদের পরিবার। আয়নাঘরে বন্দিদের আটকে রাখার জন্য খুপরি, বৈদ্যুতিক চেয়ারসহ নির্যাতনের যন্ত্র,
আটকে রাখা ব্যক্তিদের বিভিন্ন লেখা ও সাংকেতিক চিহ্ন দেখা গেছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ের একটি গোপন টর্চার সেল পরিদর্শনের সময় সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বন্দিদের নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত একটি বৈদ্যুতিক চেয়ার দেখতে পান। এর মাধ্যমে বন্দিদের বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। কোনো কোনো কক্ষের দেয়ালে লেখা দোয়া, সাংকেতিক চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেছে।
বন্দিদের দিন, মাস, বছর গণনার চিহ্ন, আই লাভ মাই ফ্যামিলি, ১৬৩, ১৫০, ১১৩, ১২৩০ ইত্যাদি সংখ্যা ঘরের দেয়ালে লেখা রয়েছে। জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের গোপন টর্চার সেলে (আয়নাঘর) আটকে রাখা হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের এই দুই উপদেষ্টা। কচুক্ষেতে আয়নাঘরে গিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম একটি কক্ষ শনাক্ত করেন, জুলাই আন্দোলনের সময় যেখানে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল।
আয়নাঘর পরিদর্শনের পর উপদেষ্টা নাহিদ জানান, তাকে যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই কক্ষের এক পাশে টয়লেট হিসেবে একটি বেসিনের মতো ছিল। ৫ আগস্টের পর এই সেলগুলোর মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়, দেয়াল রং করা হয়।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, তিনি দেয়াল দেখে কক্ষটিকে চিনতে পেরেছেন। কক্ষটি আগে অনেক ছোট ছিল, এখন মাঝের দেয়াল ভেঙে বড় করা হয়েছে। ওই কক্ষে তাকে চার দিন আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় বাইরের কারো সঙ্গে তাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। টয়লেট ছিল কক্ষের বাইরে এবং তাকে চোখ বেঁধে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হতো।
বহু বছর আয়নাঘরে বন্দি থাকা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আজমী, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাশেম আরমান, হুম্মাম কাদের চৌধুরী তাদের বন্দিজীবনের কথা তুলে ধরেন। যেসব কক্ষে তাদের বন্দি রাখা হয়েছিল, সেগুলো দেখতে পান তারা।
কিভাবে বন্দি রাখা হয়, কিভাবে নির্যাতন করা হয়, সেসবের বর্ণনা দেন তারা। আয়নাঘরে খাঁচার মতো জায়গায় যেখানে বন্দিদের আটকে রাখা হতো, সেসব জায়গা ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত সরকার আইয়ামে জাহিলিয়াত যুগ প্রতিষ্ঠা করে গেছে, যার একটি নমুনা আয়নাঘর।