হাসিনার আরো হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনে যাদের গুরুতর ভূমিকা রয়েছে!

ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যা চালিয়ে ভারতে পালানোর ঘটনা ৬ মাস পেরিয়েছে। টানা দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে তাকে ফ্যাসিস্ট ও হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনে গুরুতরভাবে ভূমিকা রেখেছিল কিছু গণমাধ্যম ও দোসর সাংবাদিকরা। হাসিনাকে ক্ষমতায় ফেরাতে আবারো তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমের এই দোসরদের। এমতাবস্থায় আওয়ামী দোসর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি আরও জোরদার হয়েছে।

সম্প্রতি পুরনো একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দোসর সাংবাদিকরা কিভাবে সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আরো হিংস্র হয়ে উঠতে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। তারা হাসিনার মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নগ্ন সমর্থন, দমনপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা ও নির্লজ্জ চাটুকারিতার মাধ্যমে রক্তপিপাসু হাসিনাকে আরও ভয়ঙ্কর, নিপীড়ক ও গণহত্যাকারী হয়ে ওঠতে উৎসাহ জুগিয়েছেন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওটি গত বছরের ২৪ জুলাইয়ের। ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যা চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়ের নামে তার চাটুকারিতা করেন বাছাইকৃত দোসর সাংবাদিকরা। হাজার হাজার হতাহত ছাত্রজনতার জন্য তাদের বিন্দুমাত্র সমালোচনা করতে দেখা তো যায়নি উল্টো বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেলের জন্য মায়া কান্না এবং প্রশাসনরে ক্র্যাকডাউনের প্রশংসা করে নরপিশাচ হাসিনাকে রক্তাক্ত দমনপীড়নে আরও উৎসাহ দেন।

নেটিজেনরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট গণমাধ্যম ও দোসর সাংবাদিকরা সবচেয়ে নেক্কারজনকভাবে হাসিনার গুমখুন, লটুপাট ও গণহত্যার সহযোগী হয়ে উঠেছিল। অন্য যে কোনো গোষ্ঠী বা সংস্থার চেয়ে সাংবাদিকরা তার ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠোর পেছনে বেশি ভূমিকা রেখেছে। তাদের বেশিরভাগই এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। ড. ইউনূস সরকারের এই উদারতা ও শিথিলতার সুযোগ নিয়ে তারা আবারও হাসিনাকে পুনর্বসানে মরিয়া হয়ে উঠেছে। চলমান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ ফ্যাসিস্ট সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নেটাগরিকরা।

ভাইরাল ভিডিওতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের তৎকালীন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, যেভাবে গাড়িগুলা পড়ে আছে, কঙ্কাল পড়ে আছে মনে হলো যে একটা গাজা বা সিরিয়ার একটা দৃশ্য। যেভাবে ভবনগুলো পুড়িয়ে দেয়া হলো পরিকল্পিতভাবে হামলা করে।

নাগরিক টিভির তৎকালীন হেড অব নিউজ দীপ আজাদ বলেন, আমরা সাংবাদিকরা যখন যাচ্ছি.. আগুনে যাতে তারা পুড়ে যায় এজন্য ড্রাইভার ও রিপোর্টার কেন বের হয়েছে এজন্য তাদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে।

একাত্তর টিভির তৎকালীন হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, কেবল দেশী চক্রান্তকারীরা নয় এর পেছনে ট্রেইনড (প্রশিক্ষিত) বিদেশী চক্রান্তকারী যুক্ত ছিল। এবং তার সাথে এলাইনমেন্ট করে বিদেশী যারা ষড়যন্ত্রকারী বা দেশবিরোধী আছে তারাও সেখানে ছিল।

ভিডিওতে গ্লোবাল টিভির সিইও সৈয়দ ইশতিয়াক রেজাকে বলতে শোনা যায়, মানুষের জীবনে যখন অনেক অস্বস্তি ছিল আজকে যখন আপনি অফিস খুললেন, আমি পথে ছিলাম মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছিল কিন্তু মানুষের মধ্যে উল্লাসও ছিল। তারা অফিস করতে চাচ্ছে, কাজ করতে চাচ্ছে।

ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, তারা বেছে বেছে আপনার অর্জনগুলোকে টার্গেট করেছে। মেট্রোরেল-ব্রিজ-এক্সপ্রেসওয়ে আপনার যে অর্জনগুলো সেগুলো টার্গেট করেছে। পাশের ভবনগুলো ভাঙেনি এই ভবনটা ভেঙেছে। ফলে টার্গেট ছিল একেবারে সুপরিকল্পিত। তারা এই ছাত্রদের আন্দোলনকে পুজি করে এটা করেছে।

হাসিনার দোসর মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভকে অকেজো করে চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমকেও অকেজো করতে হবে। তার মানে পুরো বিষয়টা হলো তাদের গোটা টার্গেটই ছিল রাষ্ট্রকে অকেজো করা।

একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ৭১, ৭৫ ও ওয়ান-ইলেভেনের সকল কুচক্রীরা এক হয়ে যখন বাংলাদেশকে ধ্বংসের এক মহাযজ্ঞে নেমেছিল মূলত জামায়াত-শিবির অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি বিএনপি এবং আমাদের এক-এগারের কুশিলবদের যে ষড়যন্ত্র ফুটেজ দেখলেই তা স্পষ্ট।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নঈম নিজামের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। আপনার সাহস এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাঙালিকে নানান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সহায়তা করেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ অক্টেবার জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের আওয়ামীপন্থি ২০ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটিশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদফতর।এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদফতর থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।

তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মো. নিজামূল কবীর স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২২-এর অনুচ্ছেদ ৬.৯, ৬.১০, ৯.৫ ও ৯.৬ এর আলোকে নিম্নবর্ণিত সাংবাদিকগণ/ব্যক্তিবর্গের অনুকূলে তথ্য অধিদফতর কর্তৃক ইতোপূর্বে ইস্যূকৃত স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হলো।

কার্ড বাতিল হওয়া সাংবাদিকগণ হলেন- জাফর আহমেদ, শাবানা মাহমুদ, মোজাম্মেল হক, ফারজানা রূপা, ফরিদা ইয়াসমিন, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শ্যামল দত্ত, নঈম নিজাম, সুভাস চন্দ্র সিংহ রায়, সৈয়দ বোরহান কবীর, মুন্নী সাহা, নাঈমুল ইসলাম খান, ফরাজী আজমল হোসেন, শাকিল আহমেদ, মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মিথিলা ফারজানা, অশোক চৌধুরী, প্রণব সাহা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *