যে কারণে এবার সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন প্রধান উপদেষ্টা!

গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দলের (বিএনপি) একটি প্রতিনিধি দল ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলটিতে এসময় অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও তার সঙ্গে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে মহাসচিব জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে কাজ করছে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। টানা দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহাসচিব বলেন, “আমরা এই সরকারকে বারবার বলেছি, তারা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে আমরা তাদের তাগাদা দিয়েছি।

ন্যূনতম কিছু সংস্কার সম্পন্ন করে এবং রিফর্ম কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।” এসময় তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এবং বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্যরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, খুব দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য কাজ করছেন।” গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়।

তবে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা এবং গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা বিজয় দিবসে বলেছিলেন, কতটা সংস্কার করা সম্ভব তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

তবে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ৫ ফেব্রুয়ারি জানান, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন আয়োজনের সময়। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি ট্রান্সজিশন দরকার, যা একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সম্ভব।”

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার ব্যাপারে মহাসচিব বলেন,এটা সরকারের সিদ্ধান্ত৷ আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে তারা কিছু একটা জানাবেন।” গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের পারফরম্যান্স ও

সুপারিশ সংবলিত একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক রয়েছে, জাতীয় নির্বাচন আগে হবে নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার ব্যাপারে কোনোভাবেই একমত নই।

আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন হবে না।” সাম্প্রতিক ঘটনাবলির দায় সরকার এড়াতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। “কারণ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীর সামনেই এসব ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।“ফ্যাসিবাদকে মদদ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশাসনের যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের দোসর ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিতে হবে।” এদিকে বৈঠকে আওয়ামীলীগের রাজনীতির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা রাজনীতি করতে চাইলে গুম,খুনের সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে ইতিবাচক রাজনীতি করতে হবে।

এছাড়া তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যায় অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। তারপর ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিবে তারা রাজনীতি করতে পারবে কিনা। এদিকে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আশাজাগানিয়া আলাপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নেটিজেনরা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

সোহেল নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আশা করি দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে পারবো।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘খুনিদের কোন ক্ষমা নয়।’ জুলহাস নামে একজন লিখেছেন, ‘ হাসিনাকে আগে আইনের আওতায় আনেন।’ লিখন লিখেছেন, ‘ আশা করি সামনে দারুণ একটি নির্বাচন উপহার দিবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *