যেভাবে সংশোধন করবেন এনআইডির ৪ ভুল

নাগরিক জীবনে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) গুরুত্ব অপরিসীম। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয় এটি। ওই সময় এনআইডির গুরুত্ব সেভাবে উপলব্ধি করা না গেলেও বর্তমানে সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। শুরুর দিকে সেভাবে বুঝতে না পারায় অনেকে তথ্য দিতে ভুল করেন।

এছাড়া নতুন যারা ভোটার হয়েছেন তাদেরও অনেকে এনআইডির গুরুত্ব না বুঝে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ফরম পূরণ করেন। কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন ও এনআইডিতে দেওয়া নাম ও বয়স গুলিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তারা নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন করেন।

এছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য না দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আবেদন সংশোধন করা যাচ্ছে না বলে জানান এনআইডি সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, এনআইডি সংশোধনে আবেদনগুলো চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি আবেদন ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ এ চার ক্যাটাগরির যেকোনো একটিতে নির্ধারণ করা হচ্ছে।

এনআইডি সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদনের পর সংশ্লিষ্টরা ধরন অনুযায়ী এসব ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে এনআইডি শাখার পরিচালক ও যুগ্ম সচিব (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান বলেন, নাম সংশোধনের মতো ছোটখাটো আবেদন করলে সেটি ‘ক’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাই এটি সংশোধন করতে পারেন। এসএসসি সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিল রেখে বয়সের সংশোধন আবেদন ‘খ’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নিজস্ব ক্ষমতাবলে এটি সংশোধন করতে পারেন। নামের আমূল পরিবর্তন ও বয়স কম বা বেশি— এমন সংশোধনের আবেদনটি ‘গ’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে। এ ক্যাটাগরির আবেদনটি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও এনআইডি হেড অফিসের দুজন পরিচালকের তদন্ত শেষে সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে। এর বাইরে আরও জটিল আবেদন অর্থাৎ এসএসসি পাস ছাড়া জন্মনিবন্ধন ও অষ্টম পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে এনআইডি সংশোধন করতে চাইলে তা ‘ঘ’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হচ্ছে।

এসব আবেদন তদন্ত রিপোর্টসহ এনআইডি মহাপরিচালক সংশোধন করে থাকেন। একজন মহাপরিচালক, সারাদেশে ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এনআইডি সংশোধনের আবেদনগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংশোধন করে থাকেন। তবে এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ক্যাটাগরি বুঝে খোঁজ নিতে হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যারা ভোটার হয়েছেন, এমন কয়েক কোটি ভোটারের দুই নম্বর ফরম ইসির অনলাইনে নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ফেলে রাখায় এসব ফরমের বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই সময় ভোটারদের পূরণ করা ইসির দুই নম্বর ফরমটির বেশির ভাগই এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ইসির অপারেটররা এনআইডিতে ভুল লিখলেও সেটা চেক করার সুযোগ থাকছে না।

এনআইডির ভুল সংশোধন করতে এসে উল্টো আরও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। এনআইডি শাখার পরিচালক ও যুগ্ম সচিব (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ক্যাটাগরি অনুযায়ী সব আবেদনই আমরা সংশোধন করছি। তবে কিছু কিছু আবেদন সংশোধন না করেই ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র দিতে না পারায় তা ফেরত দিতে হচ্ছে। আবার বয়স কমানোর আবেদনের ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের জন্য এনআইডি মহাপরিচালকের কাছে পাঠাতে হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র থাকলে আমরা আন্তরিকভাবেই এনআইডি সংশোধন করে থাকি— বলেন এ কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে এ অনুবিভাগের কার্যক্রম অনেকটাই স্বচ্ছ।

অনলাইন সেবা হওয়াতে যে কেউ ঘরে বসে এনআইডির যেকোনো সেবা পেতে পারছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোটারদের এনআইডি সংশোধনীর ফাইল আটকে থাকার বিষয়ে যা যা করার সবই করেছি। ফলে অল্প সংখ্যক জনবল দিয়েই বিশাল এ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *