বাদ পড়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা

শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে বাদ পড়া শিক্ষানবিশ ৩২১ জন বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে চাকরি ফিরে পেতে আন্দোলন করছেন। গত দুই দিন ধরে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

আর এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন। জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা মামুন অব্যাহতি পাওয়া এসআই সদস্যদের পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা পালন করছেন। সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন।

তিনি একাধিক মিডিয়ার সামনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আর্তনাদ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জানেন, এখানে ৩২১ জন পুলিশ বসে আছে ৩২১টা পরিবারকে না, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য।

একটা পুলিশ সদস্য কখন কাফনের কাপড় পড়ে। আপনারা সরকারের কাছে জবাবদিহি নেন। আমাদের কারো অপরাধ থাকলে তাকে জানায় দিয়ে বাকিদের চাকরিতে বহাল করেন। যা করে প্রকাশ্যে করেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ছিলেন। দ্বিতীয় কমিটিতে তিনি ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আর তৃতীয় কমিটি ঘোষণার আগে তিনি সভাপতি প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে লবিং করেছিলেন। তবে সেই কমিটিতে পদ না পেলেও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য হিসেবে পদ পান। ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজি,

মাদক সেবন, শিক্ষার্থীদের মারধরসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামুন ছাত্রলীগের পরিচয়ে নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে একাধিক অভিযোগ জমা হয়। যার বেশিরভাগই মারধর, চাঁদাবাজি, হলের সিট বাণিজ্য, মাদক সেবন। জানা যায়, মামুনুর রশীদ মামুনের বাড়ি দিনাজপুরে হওয়ায় সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

এছাড়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবু হুসাইন বিপুর সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, মামুন খুব প্রভাবশালী ছিলেন।

তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। তিনি নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করতে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি কয়েকদিন পর পর ফেসবুকে পোস্ট করতেন।

অভিযোগ আছে, মামুন পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ পেতে অসাধু উপায় অবলম্বন করেছেন। তাকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছিলেন পলাতক সাবেক নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এদিকে চাকরি থেকে বাদ পড়ায় এসআইদের আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র-জনতা। মঙ্গলবার ছাত্রলীগ নেতা মামুনের একটি ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক এস এম আশিকুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনে অধিকাংশই যে ছাত্রলীগ কোটায় চাকরি পেয়েছে—এইটা বলার অপেক্ষা থাকে না।

তাদের মাঝে একদল ছিল পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে, যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা একদম উপযুক্ত সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অনশনের নামে পুনরায় ছাত্রলীগকে প্রশাসন পুনর্বহাল যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা থাকে না। অনশনের নামে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের এসব অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।

স্বৈরাচারের দোসরদের কোনো স্থান প্রশাসনে হবে না। দোসরদের রুখে দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবো। তবু কোনো ছাড় নয়। রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকার বলেছেন,

‘শেখ হাসিনা পালানোর পরও আওয়ামী লীগের দোসরদের উত্থান হয়েছে। তাদের শৃঙ্খলা আইন ভঙ্গ করার কারণসহ ও সুনির্দিষ্ট যৌক্তিক কারণে অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

যৌক্তিক আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কিছু অযৌক্তিক মানুষ ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যদি নিষিদ্ধ সংগঠনের তথ্য পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হক।’

এ বিষয়ে জানতে মামুনুর রশীদ মামুনের মুঠোফোনে কল দিলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *