এক ঐতিহাসিক মহাপুনর্মিলন, সাড়ে ৭ বছর পর মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন ছেলে

রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আজ বুধবার এক অবিস্মরণীয়-অভাবনীয়-অনির্বচনীয় দিন। বাংলাদেশ থেকে ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে লন্ডনে সূর্যের ঝলমলে আলোয় উদ্ভাসিত সকালবেলায় এক ঐতিহাসিক মহাপুনর্মিলন ঘটেছে। সাড়ে সাত বছর পর বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাত হলো। দীর্ঘ দিন পর দেখা পেয়ে মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তারেক রহমান। এ সময় মা-ছেলে দুজনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী উড়োজাহাজটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।

যুক্তরাজ‍্যে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হযরত আলী খান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। বিএনপির চেয়ারপারসন সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে এসেছিলেন। এরপর তার আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানেরও সরাসরি দেখা হয়নি।

খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করে বিমানবন্দরের চতুর্থ টার্মিনালের রয়্যাল ভিভিআইপি গেট দিয়ে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়ার সরাসরি হাসপাতালে যাওয়ার কথা।

বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়াকে ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হবে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে তাঁর চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৬ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে বিদায় জানান।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসা জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় দুই মাসের মতো লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *