জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। এক সপ্তাহের বেশি সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন গুণী এই অভিনেত্রী। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুর দুই দিনের মাথায় ফের ঢাকাই চলচ্চিত্রের আরও এক নক্ষত্রের বিদায় হলো। রুপালি পর্দার নবাবখ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র সবাইকে কাঁদিয়ে রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
প্রবীর মিত্র ওরফে হাসান ইমামের প্রথম জানাজা এফডিসি ও দ্বিতীয় জানজা চ্যানেল আইয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর সোমবার (৬ জানুয়ারি) আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন প্রবীর মিত্র। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। এরপর অসংখ্য সিনেমায় বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি।
বিগত কয়েক বছর তেমন ভাবে নতুন কোন চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি প্রবীর মিত্রকে। অসুস্থ হয়ে বাসায়ই ছিলেন। বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, কেউ আমার খবর নেয় না। যেন কারোরই খবর নেওয়ার দরকার নেই।
শুধু ভাবি, কেউই তো আমার খোঁজখবর নেয় না। আমিও কারও খোঁজখবর নিই না। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে জীবনটা। এদিকে প্রবীর মিত্রের ছেলে মিঠুন মিত্র জানিয়েছিলেন, এফডিসি বা অভিনয়জীবন নিয়ে খুব একটা স্মৃতিচারণ করতেন না অভিনেতা।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বলেন এছাড়া না। চলচ্চিত্রের কেউ প্রবীর মিত্রের খোঁজও নিত না। অন্যদিকে, এ বরেণ্য এই অভিনেতার আরেক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছিল চলচ্চিত্রের সঙ্কটের কথা৷ কাজে কেউই সিনসিয়ার না জানিয়ে বলেছিলেন,
কেউ সিনসিয়ারভাবে কাজ করতে আসে না। তারা আসে ফায়দা লুটতে। ফায়দা লুটে চলে যায়। এটা ঠিক না। খুব খারাপ। আগে অনেক সিনেমা হয়েছে এবং সবাই সিনেমা হলে যেত। তাদের মুখে তখন ছিল সিনেমা হলে যাওয়া। সেটা থেকে যদি বিমুখ হয়ে
যায় তাহলে আমরা হতভাগ্য। যে দর্শকদের আমরা হারাচ্ছি। দর্শকরা সিনেমা দেখতে চায় না, হলে আসতে চায় না। আগে দর্শক হুমরি খেয়ে পড়ত সিনেমা দেখার জন্য। মাসের পর মাস হাউজফুল। সবাই সিনেমা দেখার জন্য অস্তির।
সবাইকে হলমুখী করতে সিনসিয়ালি কাজ করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলে ভালো কিছু তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা গেছে প্রবীর মিত্রকে। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় মূখ্য চরিত্রে ছিলেন তিনি। এ কারণেই অনেকে তাকে ঢাকাই সিনেমার ‘রঙিন নবাব’বলে ডাকেন।
তার অভিনীত অনান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে- জীবন তৃষ্ণা, সীমার, তীর ভাঙা ঢেউ, প্রতিজ্ঞা, অঙ্গার, পুত্রবধূ, নয়নের আলো, চাষীর মেয়ে, দুই পয়সার আলতা, আবদার, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ ইত্যাদি।অনলাইন ফিল্ম স্ট্রিমিং পরিষেবা
কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিলো’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। আর ২০১৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়।