জাতিসংঘে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

“যে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে, গল্পটা সে-ই বলবে। আমরা যতটুকু পেরেছি, করেছি। আমাদের কথা মনে রেখো।” হৃদয়বিদারক এই কথাগুলো গাজার আল আওদা হাসপাতালের সাদা বোর্ডে লিখেছিলেন চিকিৎসক মাহমুদ আবু নুজাইলা।

যেখানে সাধারণত রোগীদের অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা লেখা হয়, সেখানে এই কথাগুলো ছিল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতির এক নিঃশব্দ আর্তি। ২০২৩ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন ডা. মাহমুদ। চারপাশে ভয়াবহ হামলার সময়,

নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তিনি এই বার্তা লিখে রেখে যান। জাতিসংঘে এই মর্মস্পর্শী ঘটনার স্মৃতিচারণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত, যা সেখানে উপস্থিত সবাইকে নাড়া দেয়।

আবু নুজাইলার লেখা কথাগুলো গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পড়ে শোনাচ্ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর। এ সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি। কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ফ্রন্ট লাইন ডিফেন্ডারসের (এফএলডি) তথ্য অনুযায়ী,

চিকিৎসক আবু নুজাইলা একজন ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী ছিলেন। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা-মানবিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের একজন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী হিসেবেও কাজ করতেন তিনি।

২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর আল আওদা হাসপাতালে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় আবু নুজাইলাসহ আরও দুজন চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মী নিহত হন। এফএলডির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার সময় অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নিজের জীবন বাজি রেখে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েছিলেন আবু নুজাইলা।

শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের দূত রিয়াদ মনসুর গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) বন্ধ করতে পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘(গাজায়) এই নরকের অবসান ঘটানোর দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে আমাদের। যে জাতিগত নিধন চলছে, তা বন্ধ করার সম্মিলিত দায়িত্ব আমাদের। রিয়াদ মনসুর আরও বলেন, ‘জীবন বাঁচানোর বাধ্যবাধকতা আপনাদের রয়েছে।

নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিলিস্তিনের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা সেই কাজটা হৃদয় দিয়ে করছেন। তাঁরা ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে (হামলার শিকার) ছেড়ে যাননি। (আপনারাও) তাঁদের ছেড়ে যাবেন না। ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দেওয়া বন্ধ করুন। জাতিগত নিধন বন্ধ করান। নিঃশর্তভাবে এখনই এই আগ্রাসনের পরিসমাপ্তি ঘটান।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *