কমে আসছে শীতের সময়কাল, যা জানালো আবহাওয়াবিদরা

পৌষের শুরু থেকে রাজধানীতে তেমন শীত অনুভব না হলেও নতুন বছরের শুরুতে বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে ঢাকাতে। বছরের প্রথম দু-তিনদিন বেশ ভালোভাবে শীত টের পাওয়া গেছে ঢাকায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকেই শীত পড়ার প্রবণতা থাকলেও অনেকেই বলছেন এবার শীত খানিকটা দেরিতে এসেছে। তবে এ কথার সঙ্গে অনেকটা ভিন্নমতই প্রকাশ করছেন আবহাওয়াবিদরা। বলছেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রা এবং এই দুয়ের পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি লাগছে।

এছাড়াও কুয়াশা, জলীয়বাষ্প এবং ভূপৃষ্ঠে সূর্যের আলো কতটা সময় থাকছে– এমন নানা ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে শীতের তীব্রতা। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের সময়কাল খানিকটা কমে আসার বিষয়টিও উঠে এসেছে বেশ কিছু গবেষণায়।

আগের তুলনায় শীতের সময় কমেছে
গত বছরের তুলনায় এবছর শীতের পরিমাণ কিছুটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ঘনকুয়াশার কারণে রাতের তুলনায় দিনের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে এবং মাসজুড়েই ঠান্ডাটা থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর শীত কমে আসবে বলেও জানান আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘আগের থেকে শীতের সময় কমে এসেছে। আগে দেখা যেত ডিসেম্বর জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি শীত থাকতো। এখন দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে ওভাবে শীত আসে না। জানুয়ারিতে থাকে।‘ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর শীত কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

কমে আসছে শীতের সময়কাল
শীতের সময়কাল কমে আসার বিষয়টি নিয়ে একাধিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কালের আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করেন কেনেথ কংকেল।

এতে দেখা যায়, দেশটিতে শীতের সময়কাল কমে আসছে। একইসঙ্গে শীতের সময় তুষারপাত ১০০ বছর আগের তুলনায় প্রায় এক মাস পর শুরু হচ্ছে। আর ১৯৭১ থেকে ১৯৮০ সালের তুলনায় ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালে এই সময়টা পিছিয়েছে এক সপ্তাহ। সব মিলিয়ে ১৯১৬ সালের তুলনায় ২০১৬ সালের শীতকাল এক মাসেরও বেশি সময় কম ছিল।

গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলেই এমনটা হচ্ছে। আরেকটিই গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে পাহাড়ের উপরে তুষারপাত থাকার সময় কমে আসছে। এই তুষারপাত থেকে আসা পানির উপর নির্ভর করে লক্ষ প্রাণ বেঁচে থাকে।

শীতের অনুভূতি কখন ও কেন বৃদ্ধি পায়?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শীতলতম মাস জানুয়ারি। তবে কুয়াশা বাড়ার কারণে বর্তমানে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ। গত কয়েক বছরের শীতের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইদানীং শৈত্যপ্রবাহের সংখ্যা কমেছে কিন্তু ঘনকুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে।”

কুয়াশা কেটে গেলে শীতের তীব্রতাও কমে আসবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। একইসাথে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরে হালকা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান তিনি। প্রান্তিক পর্যায়ে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই শীতের অনুভূতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকেলেও ডিসেম্বরে তা আট থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যেই ওঠানামা করে বলে জানাচ্ছিলেন আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

তিনি বলেন, লম্বা সময় ধরে ঘনকুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে। এরসঙ্গে সূর্যের দক্ষিণায়ন বা সূর্যের আলোর প্রাপ্যতা কমে যাওয়াও শীত বাড়ার একটি কারণ। শীত বেশি লাগার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া। যেমন, শুক্রবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অর্থাৎ, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য মাত্র দুই দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ মি. মল্লিক বলেন, “সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলেই শীত অনুভূত হয়। এই পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসলে হাড়কাঁপানো শীত লাগে।”

জানুয়ারির শুরু থেকে ঢাকায় শীত বেশি অনুভূত হওয়ার এটাও একটা কারণ। শীত বেশি লাগার আরও দুটি কারণের কথা জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা- বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বাতাস। এবছর আইওডি মার্চ পর্যন্ত থাকবে বলেও জানান তিনি। আর লা নিনা কন্ডিশন ‘নিউট্রাল ফেইজের’ কাছাকাছি থাকায় বাংলাদেশ ও এর আশেপাশের দেশগুলোতে শীত বেশি পড়বে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *