খুনের পর ‘ভুল স্বীকার’ করে ফেসবুকে পোস্ট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড়!

ময়মনসিংহের নান্দাইলের কলেজছাত্র মারফত আলী হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই হত্যায় অভিযুক্ত যুবক ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর আদালতে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ‘মোহা. ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর’ নামে আইডি থেকে পোস্ট দেন তিনি। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামের কাশেম আলী ফকিরের ছেলে কলেজছাত্র মারফত আলী (২২) ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউয়িনের সাকূয়া মাঝেরচর গ্রামে একটি বিয়ের দাওয়াতে যান।

সেদিন বিকেলে তানভীর তার আত্মীয়কে মোটরসাইকেলে করে পথ এগিয়ে দিতে যান। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলটি গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় মারফতকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সবশেষ শুক্রবার রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারফতের মৃত্যু হয়।

একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় এক বছর ধরে মারফতকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তার বাড়ির পাশের বাসিন্দা মো. উসমান খা’র ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর (৩০)। এরমধ্যে তার পরিবারের কমপক্ষে ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টাও চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় ওই আহতরা পঙ্গু অবস্থায় আছেন।

এরপর ২ এপ্রিল তানভীর মারফতকে নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রাণনাশের হুমকি দেন। মৃত্যুর পরও অভিযুক্ত তানভীর ফেসবুকে দম্ভোক্তি করে হত্যার ইঙ্গিতও করেছিলেন। পরে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই হত্যায় অভিযুক্ত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে আত্মসমর্পণের একটি ঘোষণা দিয়ে পোস্ট দেন তানভীর।

পোস্টে তানভীর লিখেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আত্মসমর্পণ করলাম। ভুলভ্রান্তি মানুষেরই হয়। ঠিক তেমনি আমারও হয়েছে। নান্দাইলের মানুষ আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাস বানিয়েছে। আমি কি শীর্ষ সন্ত্রাস ছিলাম? আমাকে বানানো হয়েছে। ফকির বাড়ির (নিহত মারফতের বাড়ি) লোকজন আমাকে বানিয়েছে।

তিনি আরও লিখেন, ‘চলে গেলাম, সবাই ভালো থাকবেন। অবশ্যই আবার আসব। নান্দাইল ইনশাল্লাহ যে জায়গা থেকে আমাকে শীর্ষ সন্ত্রাস খারাপ বানানো হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমাকে ভালো মানুষ হইতে হবে। নান্দাইল আমি অবশ্যই আসব। আলম নোমান মাসুদ…তোমাদের সঙ্গে দেখা করবো ইনশাল্লাহ। আইনের চোখে অপরাধী হয়ে বেশিক্ষণ টিকে থাকা যায় না। আমি আত্মসমর্পণ করতে গেলাম। সকলেই দোয়া করবেন ফি আমানিল্লাহ…..।’

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত তানভীরের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে একটি ও নান্দাইল থানায় ৬টিসহ মোট সাতটি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলাই প্রায় এক বছর আগের। সবকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্তার কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, মারফতের খুনের আসামি ওয়াহিদুজ্জামান তানভীর এখনও আত্মসমর্পন করেননি। তাকে আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *