ভারতীয় গণমাধ্যমেও বিরোধী সুর, হাসিনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো ভারত?

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। তবে সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতেও পতিত শেখ হাসিনাবিরোধী সুর স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতও হয়তো ধীরে ধীরে শেখ হাসিনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েক দিনে ভারতের দুটি প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এবং ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’

ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার পতিত সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গত মঙ্গলবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’ পত্রিকায় বলা হয়, বাংলাদেশে অচল অবস্থার জন্য মানুষ শেখ হাসিনাকেই দায়ী করছেন।

হাসিনার দুর্নীতি, অচলাবস্থা এবং অদূরদর্শীতার জন্যই যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, তা সরানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পত্রিকাটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের কিছু মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা

করেন কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার বোন রেহানার জন্য সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আর বুধবার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ লেখে, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের নেতাদের নিয়ে রিফাইনড আওয়ামী লীগ গড়ে তোলা হচ্ছে।

এরই মধ্যে দলের নেতারা এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন বলে দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার বলে, ‘যাদের ক্লিন বলা হচ্ছে, তাদের কেউই পরিচ্ছন্ন নন। এদের অনেকে চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা করেন। সেসব বাঁচাতেই দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তে রাজি হয়েছেন।’

‘সংবাদ প্রতিদিন’ পত্রিকার প্রতিবেদক শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলেন। পত্রিকাটি লিখেছে, শেখ হাসিনার শাসনকালের দুর্নীতি, অচল অবস্থার জন্য দলের নেতাকর্মীরাই আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলছে।

এদিকে আনন্দবাজারের প্রতিবেদক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের পরিচিত কিছু নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে নব্য আওয়ামী লীগ বা পরিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগকে বাজারে আনার একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশে বেশ এগিয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব এই প্রয়াসকে প্রতারণা ও দল ধ্বংস করার চক্রান্ত বলে আখ্যা দিচ্ছেন।’

পত্রিকাটি বলছে, কয়েকজন বিএনপি নেতা ও সেনা সমর্থিত ব্যবসায়ী নতুন আওয়ামী লীগ গঠনের প্রস্তাব দিচ্ছেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব অভিযোগ করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেছে উভয় দৈনিক।

প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তৃণমূল সমর্থক ‘সংবাদ প্রতিদিন’ বলছে, ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপের পেছনে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দায়ী। তাদের স্বার্থের কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তবে ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সব প্রতিবেশীর সাথেই সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে ভারতের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ লিখেছে, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের বন্ধু ও আস্থাভাজন রাজনৈতিক শক্তি। তার নেতৃত্বেও পাকিস্তানবান্ধবদের হাতে চলে গেলে ভারতের পক্ষে তা বিপর্যয়ের চেয়ে কম কিছু হবে না।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আনন্দবাজার কিছু না লিখলেও সংবাদ প্রতিদিন বলছে, বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হিন্দু মন্দির ধ্বংসের পেছনে ছিল আওয়ামী লীগের হাত। তবে বর্তমান সরকার ও সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো।

বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে হাসিনাবিরোধী প্রতিবেদন ও সম্পাদিকীয় প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, শেষ পর্যন্ত ভারতও তাহলে হাসিনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=qkrdgppL5t8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *