থমথমে পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে, যে নির্দেশনা দিলেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রথম দফার পরোক্ষ আলোচনা শেষ হওয়ার একদিন পরই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশটির সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনার পর মধ্যপ্রাচ্যে বিরাজ করছে এক ধরণের থমথমে উত্তেজনা।

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় না আসে, তবে দেশটির ওপর সামরিক হামলা চালানো হবে—এমন হুমকি আগেই দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে ওমানের রাজধানী মাসকাটে ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে প্রথম দফার পরোক্ষ আলোচনা।

এই আলোচনায় তেহরানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকপ। ২০১৮ সালের পর এই বৈঠককে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের আলোচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বৈঠক শেষে আরাকচি জানান, “অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনো রকম অশালীন ভাষা ব্যবহার করেনি।” বিশ্লেষকদের মতে, তার এই মন্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে মার্কিন প্রতিনিধি দল এবার বোমা হামলার হুমকি পুনরায় দেয়নি।

তবে বৈঠকটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার পরিবেশ ছিল ততটাই সংযত। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যে কোনো ছবি তোলা হয়নি। এমনকি তারা ছিলেন পৃথক কক্ষে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর বিন হামাদ আল বুসাইদের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান হয় উভয় পক্ষের।

হোয়াইট হাউস বৈঠকটিকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বলে আখ্যা দিয়েছে এবং জানিয়েছে, কূটনৈতিক উপায়েই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

এরইমধ্যে দ্বিতীয় দফা আলোচনা সামনে রেখে ওয়াশিংটন সফর করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে ২০০৩ সালের লিবিয়া চুক্তির মতো একটি কড়াকড়ি চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

এদিকে, এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ইরানের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে খামেনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে শত্রুদের চাপ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। শত্রুরা আমাদের বাহিনীর মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত।”

যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, “যাদের মধ্যে বিশ্বাস, সাহস ও আস্থার অভাব রয়েছে, তারা যতই অস্ত্রে সজ্জিত থাকুক না কেন, তাদের পতন অনিবার্য।”

ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরী খামেনিকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমাদের বাহিনী প্রস্তুত। শত্রুরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।”

এই পরিস্থিতিতে পারমাণবিক ইস্যু ও সামরিক উত্তেজনার মাঝে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থির পরিবেশ, যার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে গোটা অঞ্চল।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/xgQlEi21DU4?si=VNhUWrEQXA3wo2vu

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *