
টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েকমাস ধরে ভুগছিলেন কুমিল্লার লালমাইয়ের আক্তার হোসেন। বুধবার দিবাগত রাতে তিনি মারা যান, আর বৃহস্পতিবার সকালে তার ছেলে মো. নাহিদের ছিল এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে নাহিদকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে বাবার লাশ।
গতকাল দুপুরে লালমাই উপজেলার বড় হাড়গিলা এলাকায় নাহিদের বাবার দাফন কাজ শেষ হয়। নাহিদ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। উপজেলার মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, নাহিদের বাবা আক্তার হোসেন ৪ মাস ধরে টিবি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে নাকে মুখে রক্ত বের হতে থাকলে তার বাবাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার বাবার মৃত্যু হয়।
নাহিদের পরীক্ষার কথা ভেবে তার বাবার জানাজা এবং দাফনের সময় নির্ধারণ করা হয় দুপুর ২টা। সে অনুযায়ী গতকাল পরীক্ষা শেষ করে হল থেকে বেরিয়ে নাহিদ সোজা চলে যায় বাবার জানাজায়। সেখানে গিয়ে জানাজায় অংশ নেন তিনি। জানাজা শেষে বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে করে কবর পর্যন্ত নিয়ে যান তিনি।
হরিশ্চর ইউনিয়ন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ইলিয়াছ কাঞ্চন বলেন, বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষার হলে এসেছিল নাহিদ। তার জন্য আমাদের সমবেদনা রইল।
নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে বাবার নিথর দেহ বাড়ির উঠোনে একা রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। পরীক্ষার হলে বসেও বাবাকেই ভাবছিলাম। কিছু লিখতে গেলেই খাতা দেখা যায় না, সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ চোখে ভাসছিল।
তারপরও কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। পরিবারে আমার মা রয়েছে। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। আমার ছোট ভাইটি মাতাইনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবাহীন একটি অসচ্ছল পরিবার কীভাবে সামনে পথ চলবে সেটাই ভাবছি। সবাই আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।