একদল চাঁদাবাজি করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আরেকদল করুক চাই না : জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একদল চাঁদাবাজি করে পালিয়েছে, আরেকদল চাঁদাবাজি করুক তা চাই না। তিনি চাঁদাবাজির মতো ঘৃণিত কাজ না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।

আজ শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে জামায়াতের আমির যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে আয়োজিত দলীয় কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এই মন্তব্য করেন। দলের যশোর জেলা শাখা এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে দেশ দুঃশাসন ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। আওয়ামী লীগের ইতিহাসই হলো দুঃশাসন আর দুর্নীতির।’

তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদী রেজিম শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। রংপুরে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়েছিল।

তার ভরসা ছিল, দেশের পুলিশ তার বুকে গুলি চালাবে না। কিন্তু পুলিশ গুলি করে তার বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।’ প্রায় দুই হাজার মানুষের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।

ডা. শফিক বিগত সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে দাবি করে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু কোনো ভুয়া মামলা করবেন না।

নিরীহ কোনো মানুষকে হয়রানি করবেন না।’ ‘বিগত সরকার শিক্ষার সর্বনাশ করে গেছে’ উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা সুযোগ পেলে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ গড়ার চেষ্টা করব।

আমরা এমন শিক্ষা উপহার দিতে চাই, যেখানে মানুষ সার্টিফিকেটের পাশাপাশি কাজও পাবে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ব্যাংক, ব্যবসা স্থবির।

অন্তর্বর্তী সরকার রিজার্ভ বাড়িয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হচ্ছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি।’ ‘দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই’ মন্তব্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সবাই এই দেশের নাগরিক।

এখানে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে বসবাস করব।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বড়ি বিক্রি করবেন না। অনেক করেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন ১৬ ডিসেম্বরকে তাদের বিজয় দিবস হিসেবে বর্ণনা করেন, তখন কোথায় থাকে আপনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? একবার তো প্রতিবাদও করেন না। আমরা কিন্তু প্রতিবাদ করেছি।’

শফিকুর রহমান ‘ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সাম্য ও ইনসাফের বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘তবে আমরা কোনো সাম্রাজ্যবাদী প্রভুকে মেনে নেব না।

তিনি লড়াইয়ে শহীদ পরিবারগুলোর পাশে থাকার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, সুশাসন কায়েম করাই উদ্দেশ্য। আমরা এমন একটি দেশ দেখতে চাই, যেখানে চাঁদাবাজ থাকবে না।

কোর্ট-কাছারিতে দুর্নীতিবাজরা থাকবে না। সবার কাজের মূল্যায়ন হবে। কোনো হানাহানি নয়, একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সমাজে ইনসাফ কায়েম হবে।’

কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের যশোর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মাওলানা আজীজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমির

অধ্যাপক আলী আযম, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমীন, মাগুরা জেলা আমির এম বি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, ডা. মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ,

যশোর জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আব্দুল আজিজ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

সম্মেলনে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে। কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ছাড়িয়ে লোকজন ছড়িয়ে পড়ে পাশের মুজিব সড়ক, মুনসী মেহেরউল্লা সড়ক, আদালত চত্বরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *