সারজিসের ওপর হামলার ইস্যুতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলো প্রাইভেটের শিক্ষার্থীরা!

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় আহত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে থানায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের অনুসারীরা। বুধবার মধ্যরাতে ভাটারা থানায় গিয়ে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন তারা।

এ ঘটনায় সারজিস আলম হামলাকারীদের ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। হামলায় অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই অছাত্র বলে তার ভাষ্য। একই ঘটনায় পালটা অভিযোগ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও। আহত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মুশতাক তাহমিদ হামলায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজারুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনায় থানায় দুই পক্ষ বুধবার রাতে দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত কোনো পক্ষের অভিযোগ মামলা হিসেবে এন্ট্রি হয়নি। তবে দুটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ওসি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সারজিস আলমের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করেছেন মাহমুদুল রাইয়ান মইন। তিনি চার-পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০/৩৫ জনকে অভিযুক্ত করেছেন। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের অভিযোগ পেশ করেছেন মোহাম্মদ সাকিন আহমেদ। অভিযোগে তিনি সারজিস আলমসহ ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অভিযুক্ত করেছেন। হামলার ব্যাপারে ওসি জানান, ঠেলা ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে। আহত হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সড়কের মধ্যে রাত ১০টার দিকে এ দুই অংশের মধ্যে হাতাহাতি বিষয়ক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনা একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, সারজিস আলম তার অনুসারীদের নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি সড়কে কথা বলার সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে ধাক্কা-পালটা ধাক্কা ও হাতাহাতি শুরু হয়। রাত ১০টার দিকে তারা যেখানে বিতণ্ডায় জড়ান তা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুজন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে রাত ২টার দিকে সারজিস আলম তার ফেসবুক প্রোফাইলে এ হামলার জন্য ছাত্রদলকে দায়ী করে পোস্ট দেন।

সেখানে তিনি লেখেন, ইফতারের পর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সহযোদ্ধাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা দিতে এবং তাদের কথা শুনতে যাই। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা হয়, তাদের কথা শোনা হয়, চায়ের আড্ডা হয়। এনএসইউ, আইইউবি, এআইইউবি, ইউআইইউ-এই চার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে এনএসইউর সামনে দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। আমার সঙ্গে ১৫-২০ জন প্রাইভেটের সহযোদ্ধারা ছিল।

এর আগে বুধবার রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে একজন লেখেন, ‘এনসিপিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বঞ্চিত করার পর সারজিস আলম আজ আসছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার অনুসারীদের নিয়ে এই এলাকায় শোডাউন দিতে। এ খবর শুনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে), আইইউবির (ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ) সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সারজিসের অনুসারীদের ওপর চড়াও হন। পরে সবার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সারজিস তার গাড়িতে উঠে বসুন্ধরা এলাকা থেকে চলে যান। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সারজিসকে বসুন্ধরা এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।’

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে ঘিরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হট্টগোল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও পুরো ছাত্রদলের ওপর দায় দিতে চান না হামলায় আহত শিক্ষার্থী মো. মুশতাক তাহমিদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেটের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশতাক তাহমিদ বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বুধবারের ঘটনায় ছাত্রদলের কয়েক জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে আমি কয়েক জনকে চিনি। এদের মধ্যে আহমেদ শাকিল ও মাসরুর হামলা করে। আহমেদ শাকিল আমাকে ছুরিকাঘাত করে এবং মাসরুর মাথায় কামড় দেয়। বুধবারের ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কেউ সেখানে ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *