
শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নিহত গোলাম জাকারিয়া বাদলের জবানবন্দির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জড়িতদের নাম ওই জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।
এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শুধু হয় জেলাজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া। এসময় তিনি ৯ জনের নাম উল্লেখ করে যান। পুলিশ বলছেন শুধু ওই ৯ জনই নয়, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
নিহত বিএনপি নেতার ভিডিওতে বলে যাওয়া হামলাকারীরা হলো- সদরের রঘুনাথপুর ভুইয়ারচর এলাকার মো. মোতালেব হোসেনের ছেলে মো. লালন মিয়া (২৮), রঘুনাথপুর চকপাড়া এলাকার মৃত হাবুল মিয়ার ছেলে মো. মেহেদী হাসান (৩২), রঘুনাথপুর দীর্ঘপাড়া গ্রামের মো. সোহেল মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬), রঘুনাথপুর ভুইয়ারচর এলাকার মো. সাইদুর রহমানের ছেলে মো. শাওন মিয়া (২৮), রঘুনাথপুর দড়িপাড়া এলাকার মৃত মানিক মিয়ার ছেলে মো. আক্কাস আলী (৩৫), রঘুনাথপুর এলাকার তোফায়েল উদ্দিনের ছেলে মো. লুৎফর রহমান (৫৫), রঘুনাথপুর দীর্ঘপাড়া এলাকার মো. আব্দুল জলিলের ছেলে মো. দিপু মিয়া (৩০), রঘুনাথপুর দড়িপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. শাহিন মিয়া (৩৩) এবং একই এলাকার মো. তালহা (২৮)।
এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১ মার্চ সকালে ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজপুর এলাকা থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। পরদিন রোববার বিকেলে তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর ভূঁইয়ারচর এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে লালন মিয়া (২৮), সোহেল রানার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৬) ও খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে মাজাহারুল ইসলাম মুরাদ (২৮)। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম।
অপরদিকে এ ঘটনায় বিএনপির একটি পক্ষ জড়িত থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শেরপুর সদরের কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানকে বহিষ্কার করেছে শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপি। শনিবার সকালে শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ মো. হজরত আলী ও সদস্য সচিব মো. ফরহাদ আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার ও দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হন শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বাদলসহ চার জন। বাদলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। পরে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে উত্তরা এলাকায় তার মৃত্যু হয়। তিনি সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস ছিলেন।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় নিহত বাদলের স্ত্রী পপি বেগম বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২৩ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় শেরপুর সদর থানায় কৃষক লীগ নেতা ও কামারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীকে ১ নম্বর আসামি এবং কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক মো. লুৎফর রহমানকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
জাকারিয়া বাদলের স্ত্রী পপি বেগম বলেন, আমার স্বামী অত্যন্ত নরম স্বভাবের মানুষ। সে কখনো ঝগড়া করতো না। তার নেতৃত্বের প্রতি হিংসা করেই এই হামলা করা হয়েছে। আমার স্বামী অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইদুল আলম বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আসামিরা মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দেশের বিভিন্নস্থানে লুকিয়ে আছে। ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ৩ আসামিকে ফেনী জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।