মধ্যরাতে বাসে ডাকাতি ও ‘ধর্ষণ’, যাত্রীদের লোমহর্ষক বর্ণনা

ঢাকা-রাজশাহী রুটে গত সোমবার মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি বাস ডাকাতের কবলে পড়ে। বাসটিতে ডাকাতির পাশাপাশি ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে নাটোর পুলিশ ওই বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করলেও অভিযুক্তরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

ওই বাসের যাত্রী ব্যবসায়ী সোহাগ হাসান হাসান বলেন, গাড়ি যাত্রী বোঝাই থাকলেও গাড়ির চালক ও তার সহযোগীরা আরও সাত-আটজনকে মাঝপথে গাড়িতে তুলে এবং তারপর গাড়ির চালকের আসনে তাদেরই একজন বসে পড়ে। ওই দলের বাকিরা তখন যাত্রীদের কাছে চলে আসে এবং গলায় চাকু ধরে। তারা বাসের আলো জ্বালাতে নিষেধ করেছিল।

তারা পাঁচ-ছয়জনকে ছুরিও মারে। এই ভয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। সবার মাথা নিচু করে ছিল। ওরা বলছিল, চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিব। তিনি দাবি করেন, তার ও ওমর আলীর কাছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা চাইলে তারা শুরুতে ২০ হাজার টাকা দেন,

কিন্তু গাড়ির চালক-সহযোগীরা ডাকাতদেরকে দেখিয়ে দেয় যে তাদের কাছে আরও টাকা আছে। সোহাগ বলেন, আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ওরা আমায় নিচে ফেলে আমার বুকের ওপর পাড়া দিয়ে রাখছে, টাকা না দেওয়া পর্যন্ত। আর ওরা বাস থেকে না নামা পর্যন্ত আমায় নিচেই রাখছে।

এ সময় তিনি ও ওমর কথা বলতে পারছিলেন না, মাথা উঁচু করতে পারছিলেন না, চোখ খুলতে পারছিলেন না। শুধুই বাসের দুই নারী যাত্রীর চিৎকার আর কান্নার আওয়াজ শুনছিলেন। হাসান বলেন, ওই দুই নারীর সিট ছিল বাসের মাঝামাঝি। তাদের মাঝে একজন হিন্দু, তার সাথে তার স্বামীও ছিলেন। ডাকাতরা প্রথমে ওই নারীর কাছে যা যা ছিল, সব নিয়ে নেয়।

এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই মহিলাকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে। ওই নারীকে পিছনে নিয়ে গেলে উনি অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না।

আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদতেছিল, কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। ধর্ষণ না করলে কেউ এ রকম চিৎকার করবে না। গুড় ব্যবসায়ী মজনু আকন্দও সেদিন ওই বাসে ছিলেন। তিনি বলেন, ওই রাতে আমরা যে চিল্লাচিল্লি শুনছি… তাতে মা-বোনের ইজ্জতের…গাড়ির ভেতরে আমাদের কোনো ভাষা ছিল না। ওনাদের মানসম্মানের ক্ষতি করছে, ধস্তাধস্তি করছে।

মজনু বলেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন দুইজন নারী। একজনের বয়স ছিল আনুমানিক ২০ বছর, আরেকজনের ২৫-৩০ বছর। তিনি বলেন, ওই দুই নারী থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করছে কি না জানি না। গাড়ির মাঝে দুইজন যে নির্যাতিত হইছে, সেটা আমরা জানি।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাত ২টার দিকে গাজীপুর বা টাঙ্গাইল থেকে ডাকাত গাড়িতে উঠে। যাত্রীদের কাছ থেকে তারা সব নিয়ে নেয়। পরে ভোর ৫টার দিকে কোথাও নেমে যায়। ডাকাতরা বাস থেকে নেমে গেলে মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন।

ওসি বলেন, যাত্রীরা বাস আটক করে বলে যে ড্রাইভার-হেল্পাররা জড়িত এই ঘটনায়। তাদের যাত্রীদেরকে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরে আমরা গিয়ে ওদের আটক করি। আমরা যাত্রীদেরকে মির্জাপুর বা টাঙ্গাইল বা গাজীপুরে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।

এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটি এলে সাত-আটজনের ডাকাত দল গাড়িতে উঠে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। মির্জাপুর সীমানায় এটা ঘটেনি। আর এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। ডাকাতরা ডাকাতি শেষে নন্দন পার্কের পাশে এসে নেমে যায়। উভয় থানার ওসি জানিয়েছেন, তাদের কাছে কোনো নারীই ধর্ষণের অভিযোগ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *