সাবেক আইজিপি শহীদুলের ‘কোটি টাকার ডায়েরি’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হকের এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই বস্তা গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব নথির সঙ্গে একটি ডায়েরিও পাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা,

যে ডায়েরির পাতায় পাতায় লেখা দেশের বিভিন্ন তপশিলি ব্যাংকে থাকা কোটি কোটি টাকার এফডিআরের বিবরণ, আছে ফ্ল্যাট ও ধারদেনার ফিরিস্তিও। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শহীদুল হকের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে দুদকে। এরই মধ্যে দুদক গোয়েন্দা তথ্য পায়—শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের

তথ্য সংবলিত নথিপত্র তার একজন নিকটআত্মীয়ের কাছে দুটি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, নথিপত্রগুলো গোপন রাখার জন্য তার সেই আত্মীয় অন্য এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান।

এমন খবরে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল শহীদুল হকের ওই আত্মীয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

তল্লাশিকালে দুটি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে বিপুল মূল্যমানের সম্পদের দলিল, বিভিন্ন গোপন চুক্তিপত্র, ডিড অব অ্যাগ্রিমেন্ট, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, সংঘ স্মারকের ছায়ালিপি,

অফার লেটার, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী ইত্যাদি। এসব তথ্য অনুসন্ধান কার্যক্রমে সহায়ক হিসেবে কমিশনের কর্মকর্তারা নিরপেক্ষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে আলামতগুলো জব্দ করেন।

জব্দ করা আলামতের মধ্যে একটি বিশেষ ডায়েরিও পাওয়া যায়। সেই ডায়েরিতে শরীয়তপুরের আলোচিত ‘মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন’ ও ‘মজিদ জরিনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের’ নামে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে বিপুল অর্থের এফডিআর ও সম্পত্তির তথ্য

বিবরণী লেখা রয়েছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। অর্থ-সম্পদের বিবরণী ছাড়াও কোন তারিখে কত টাকা কাকে দেওয়া হয়েছে, সে তথ্যও লেখা আছে ডায়েরিতে।

ডায়েরিতে যা লেখা রয়েছে: ইকবাল নামে একজনের বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২৯/১১/১৮ তারিখে প্রথমে তাকে ৫ কোটি টাকা ধার দেন, এরপর একই ব্যক্তিকে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর ৫ লাখ, পরের বছরের ১৯ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ ও ১৯ এপ্রিল তারিখে ফের ১০ লাখ টাকা ধার দেন।

একটি পাতায় রাজধানীর কুড়িলে ৪ হাজার ৫৭১ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের তথ্য রয়েছে, যার দলিল নম্বর লেখা ৩০০৯, তারিখ ২১ মার্চ ২০১৯। আরেক পাতায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সেনানিবাস, বসুন্ধরা ও কুড়িল শাখায় তিনটি এফডিআরের তথ্য আছে। হিসাবগুলোতে মোট টাকার পরিমাণ ৫ কোটি ৫০ লাখ।

ফারমার্স ব্যাংকের ৮টি এফডিআরের তথ্য রয়েছে ডায়েরিতে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে করা এফডিআরগুলো মোট ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া যায়। আরেক পেজে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৪টি এফডিআরের তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে করা এফডিআরগুলোতে মোট টাকার পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লাখ। আরেক পাতায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার হিসাব দেখা যায়, যা গুলশান করপোরেট শাখা, বকশীগঞ্জ শাখা ও বসুন্ধরা শাখায় জমা রয়েছে।

তবে ব্যাংকের নাম উল্লেখ নেই। আরেক পাতায় পদ্মা ব্যাংকে দুটি এফডিআরে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৫০ লাখ, ফারমার্স ব্যাংকে ৪০ লাখ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ৩০ লাখসহ ৭টি এফডিআরে মোট

১ কোটি ২০ লাখ টাকার তথ্যও রয়েছে ডায়েরির পাতায় পাতায়। এসব এফডিআরের হিসাব নম্বর ও তারিখসহ বিস্তারিত তথ্য কালবেলার হাতে রয়েছে। আরেকটি পাতায় একটি জাপানি কার কোম্পানির এসএম মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ৫ লাখ করে ৭ বারে ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধের তথ্য পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *