‘গণহত্যার পাহারাদার’ সেই র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে…………

র‌্যাব ১০-এর অধিনায়ক ছিলেন ফরিদ উদ্দিন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখেন তিনি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে তার রাখা অবদান এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আছে।

কিন্তু তাকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। বরং নিরাপদ জায়গায় পদায়ন দিয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এবার সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে ঢাকার আদালতে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি করা এ মামলায় তাকে ‘গণহত্যার পাহারাদার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জানা গেছে, রিয়াজ মোর্শেদ অপু (২৪)-কে হত্যার অভিযোগে মামলাটি করেছেন যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কুতুবখালির রুমা বেগম।

ভিকটিম অপু তার ভাগিনা বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, র‌্যাব কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনসহ ২৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে ফরিদ উদ্দিনসহ ৪৫ জনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলের চারিদিক পাহারা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা যেন ভিকটিমকে রক্ষা করতে এগিয়ে না আসতে পারে তার জন্য এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন এবং অস্ত্র উঁচু করে ভীতি প্রদর্শন করেন।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান ইতোমধ্যে মামলাটি আমলে নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার মিজানুর রহমান মামলার বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করে বলেছেন,

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলা এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিনকে ডিআইজি এপিবিএন

(পার্বত্য জেলাগুলোর কার্যালয়ে) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। আর পদায়নের পর ছাত্র আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা সামনে আসতে থাকে। আন্দোলনের সময়ে ধারণ করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকা ভিডিওতে ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল,

‘এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী নেই, সরকারবিরোধী লোকজন জড়ো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি প্রাণহানি ঘটাই তাহলে এখানে ক্লিয়ার করতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে সামনের সারিতে থাকা এই র‌্যাব কর্মকর্তা পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টাতে থাকেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে পার্বত্য জেলাগুলোয় এপিবিএনের সিইও হিসেবে পদায়ন করা হয়। এতেই চটেছেন জুলাই আন্দোলনের নেতারা।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, র‌্যাব ১০-এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন যাত্রাবাড়ীর আন্দোলন দমনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটি গণমাধ্যমে এসেছিল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এ সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি, তাকে পুরস্কৃত করেছে। তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এমন একজন অফিসার কীভাবে বিচারের মুখোমুখি না হয়ে পদোন্নতি পায় সেটা আমাদের প্রশ্ন।

ফরিদের পদোন্নোতির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে ঢাকা আইনজীবী সমিতির (এডহক) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকটে নজরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, যাত্রাবাড়ীতে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার মহানায়ক, ১০ মিনিটে আন্দোলন ক্লিয়ার করে ফেলবে এবং আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা বলা র‌্যাব-১০ এর ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা বরং জুলাই হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার হিসেবে তাকে সিইও পদে পদায়ন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কালবেলাকে তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফরিদের মতো অফিসারকে বিচার না করে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এদিকে মামলা দায়ের ও ছাত্র নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশের পর থেকে ওই কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে গরহাজির রয়েছেন বলে জানা গেছে। চেষ্টা করেও এসব অভিযোগের ব্যাপারে ফরিদ উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *