আলোচিত ডিআইজি মোল্যা নজরুল এবার ফাঁসছেন দুদকের জালে!

আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলামের অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে প্রায় ৬১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামাল, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে।

মামলা হয়েছে কামালের এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধেও। তবে সহযোগী মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখনও দুর্নীতির কোনো মামলা হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদের খোঁজ মিলেছে বলে জানা গেছে। শিগগিরিই তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এক যুগ আগে ২০১৩ সালে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ওই কমিশনারের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান করলেও অদৃশ্য কারণে পার পেয়ে যান।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার দুদকের জালে ফাঁসতে যাচ্ছেন তিনি। এরই মধ্যে সাবেক ওই কমিশনারকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা (মহাপরিচালক) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৩ সালে ঘুষ লেনদেনের একটি অভিযোগের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করে, সেই অভিযোগ থেকে পার পেয়ে গেলেও এবারে দুর্নীতির মামলার আসামি হতে যাচ্ছেন তিনি।

বর্তমান পেক্ষাপট ও তার বিরুদ্ধ দুর্নীতির প্রমাণ সব মিলিয়ে দুদকের অনুসন্ধানে গতি রয়েছে। শিগগিরই মামলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর মাস খানেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। পরবর্তীতে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি।

এসময় পূর্বের চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তীতে বাকি টাকাও দেওয়া হয়। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হয় আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায়। এমন অভিযোগের সূত্র ধরেই বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি টিম অনুসন্ধান কাজের নেতৃত্বে দিচ্ছেন।

দায়মুক্তি মিলেছিল যে অভিযোগে
২০১৩ সালের ৯ জুন মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছিল দুদক। অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসাবে তৎকালীন দুদকের উপপরিচালক নাসিম আনোয়ার ও তদারককারী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে পালন করেন তৎকালীন পরিচালক তাহিদুল ইসলাম। সে সময় ঘুষ লেনদেন সম্পর্কে নড়াইল এলাকার তৎকালীন এমপি কবিরুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী সৈয়দ আবিদুল ইসলাম নড়াইলের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতা। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল রাতে ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামকে গুলশানের বাসা থেকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে তার কাছে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়।

এক কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার পর আবিদকে পরের দিন ৭ এপ্রিল ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসনাত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শান্তি নগর শাখা থেকে ঘুষের টাকা তোলেন। ব্যাংকের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি) ভিডিও ফুটেজ যোগ করা হয়েছিল অভিযোগের সঙ্গে। অনুসন্ধানে ধারাবাহিকতায় ব্যাংক হিসাব ও এসআই হাসনাতের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও দুদকের হাতে ছিল।

এছাড়া ঠিকাদার ব্যবসায়ী আবিদুলের পাশাপাশি আরও তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০, ৬৭ ও ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ছিল মোল্যা নজরুলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মোল্যা নজরুলকে ওই পদ থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্সে ন্যস্ত করা হয়েছিল। পাশাপাশি ডিবির পরিদর্শক আজহার উদ্দিন ও এসআই হাসনাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় ওই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *