পাঁচ মাস আগের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হলো!

প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মব জাস্টিস বন্ধের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। কয়েক মাস আগে দেওয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি নিজে আবার তার নিজের আইডিতে শেয়ার করেছেন। স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো:

মব জাস্টিস এখনই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বাংলাদেশে যেভাবে মব জাস্টিসের প্রবণতা শুরু হয়েছে, এটি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনীতি এবং বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

যে বিষয়টি শুরুতে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি মানুষের সীমাহীন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল, এখন তা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাতে অস্ত্র হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ এটিকে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যবহার করছে,

কেউ আবার নিছক আনন্দের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে, যেখানে ছাত্রদের অংশগ্রহণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এখন এটি এমন এক দানবীয় রূপ নিচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে— এমনকি যোগ্য শিক্ষকরাও এর শিকার হচ্ছেন।

এটা কি আদৌ ন্যায়সঙ্গত? স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলো ছাত্রদের ব্যবহার করছে, আর ছাত্ররাও যেন খুব সহজেই তাদের হাতের পুতুল হয়ে উঠছে— ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এমন এক সময় আসবে,

যখন ছাত্রদের ন্যায্য দাবিও অবজ্ঞার শিকার হবে, আর শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই। এর পাশাপাশি, নৈতিক পুলিশিং-এর যে বিষাক্ত চিন্তাধারা ছাত্রদের মনে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে, সেটাও দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে যথেষ্ট।

এখানে পরিষ্কারভাবে বলা প্রয়োজন— একমাত্র ছাত্ররাই শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারকে পতন ঘটায়নি। এই সত্য আমি বারবার জোর দিয়ে বলতে চাই। মনে রাখতে হবে, ছাত্রদের আন্দোলন কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল।

তারা কখনোই আওয়ামী লীগ সরকার ফেলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেনি, বিশেষ করে শেখ হাসিনার মতো শক্তিশালী শাসকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার যখন দমনপীড়নের মাত্রা ছাড়িয়ে যায় এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে,

তখনই দেশের সাধারণ মানুষ তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়— ছাত্রদের অনেক আগেই। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অবিচল অংশগ্রহণই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত করেছিল।

এখন সেই ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা লুটপাট চালাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখা যেতে পারে। এতে কোম্পানিটি প্রায় ২,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে,

অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টায়ারের বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে, ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, কোম্পানির রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে।

এটি দেশের অর্থনীতির জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো, ঐ কারখানায় কর্মরত ৪,০০০-৫,০০০ শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *