ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন মানিক বিডিআরে যোগ দেন। এরপর বাড়িতে এসে পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেন। ফ্যামিলি ট্যুর প্যাকেজ
বিয়ের ১৪ দিনের মাথায় আটকা পড়েন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায়। তারপর একে একে কেটে যায় ১৬টি বছর। তবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন তিনি। দেড় দশক পর স্বামীকে কাছে পেয়ে স্ত্রী বেবী আক্তারের কান্না যেন থামছেই না।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মায়ের কোলে ফেরেন সাবেক এই বিডিআর জওয়ান।
বাড়ির পাশে বাস থেকে নামলে এলাকাবাসী ফুলের মালা দিয়ে মোতাহারকে বরণ করে নেয়। এরপর তাকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় তার মা মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বুকের ধন ফিরে পেয়েছি। আর যেন কোনো মাকে এভাবে কষ্ট ভোগ করতে না হয়।
মোতাহার হোসেন আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও কচুবাড়ী জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। বাড়ি ফিরে বাবাকে না পেয়ে মোতাহার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিন বছর আগে তার বাবা মারা যান।
চাকরির ছয় মাস বয়সে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৬ বছর জেল খাটেন মোতাহার। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরলে বাবা তাকে বিয়ে দেন পাশের গ্রামের বেবী আক্তারের সঙ্গে।
১৪ দিন সংসার শেষে কর্মস্থলে ফিরে যান মোতাহার। ১৬ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর কাছে ফিরলেন অবশেষে। স্বামীকে ফিরে পেয়ে কান্না যেন থামছিল না বেবী আক্তারের।
বেবী আক্তার বলেন, বিয়ের ১৪ দিনের মাথায় স্বামী কারাগারে চলে যান। তখন থেকে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। দিন গড়িয়ে বছর হয়েছে, বছর গড়িয়ে দশক হয়েছে, তবু তার মুক্তি মেলেনি। ১৬ বছর পর সেই দিন এলো।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া মোতাহার হোসেন বলেন, সম্পূর্ণ বিনা বিচারে আমি ১৬ বছর কারাগারে ছিলাম। যদি সঠিক বিচার হতো তাহলে আমাকে কারাভোগ করতে হতো না।
১৬ বছর পর মায়ের কোলে ফেরা অন্যরকম এক অনুভূতি। এটা বলে বোঝানো যাবে না। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাত্র ছয় মাস চাকরির বয়সে বিনা অপরাধে ১৬ বছর জেলখানায় কেটে গেছে।
কী থেকে কী হয়েছে, এটা সবাই জানে। তিনি বলেন, ছয় মাস চাকরি আর ১৬ বছরের জেল। এই অল্প সময়ে কী অপরাধ করতে পারি বলেন? বাড়ি ফিরেছি, তবে একটাই চিন্তা, ১০ তারিখ কোর্ট আছে।
প্রহসনের কোর্ট; মামলার বাদী বলেছেন, আমাদের ওপর প্রহসনের মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই এটি ডিস্ট্রয়, বাতিল বা শেষ করতে পারে। জানি না আর কত দিন হয়রানি হতে হবে।
সাবেক এই বিডিআর সদস্য বলেন, আমাদের অনেক অসহায় ভাই এখনো ভেতরে আছেন। তাদের কোনো অপরাধ নেই। মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই সরকারের উচিত তাদের ছেড়ে দেওয়া। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিজম দূর হওয়ায় আমি মায়ের কোলে ফিরে আসতে পেরেছি।