যুক্তরাষ্ট্রের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পেতে ভারতীয়দের সিজারের হিড়িক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দম্পতিদের মধ্যে সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রবণতা বেড়ে চলেছে। অনেক গর্ভবতী নারী ডাক্তারদের কাছে এসে অনুরোধ করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসব করানোর জন্য।

কিন্তু চিকিৎসকরা সাধারণত প্রাক-পরিণত (প্রি-টার্ম) অস্ত্রোপচারের বিরুদ্ধে পরামর্শ দেন। কারণ, এটি মা এবং সন্তানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং শিশুর সারাজীবন স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তা সত্ত্বেও, কেন এত ভারতীয় দম্পতি এই ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছেন?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের শুরুর দিকেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এই আদেশ অনুসারে, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এর মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুদের

আমেরিকার নাগরিকত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেওয়া হবে। তবে, এর পর জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পেতে হলে তাদের বাবা-মা’র মধ্যে অন্তত একজনকে মার্কিন নাগরিক বা গ্রিন কার্ডধারী হতে হবে। অন্যথায়, ওই শিশুরা ২১ বছর বয়সের পর যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে বাধ্য হবে।

বৈধ অভিবাসী কর্মীদের জন্যও এই আদেশ বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ ভারতীয় তাদের গ্রিন কার্ড আবেদন নিয়ে জটিলতার মুখে আছেন।

নিউ জার্সির একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত গাইনোকোলজিস্ট জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ২০ জন ভারতীয় দম্পতির কাছ থেকে এ বিষয়ে ফোন পেয়েছেন। অনেকেই তাদের সন্তান নির্ধারিত সময়ের আগে প্রসব করানোর জন্য পরামর্শ চাচ্ছেন।

একজন সাত মাসের গর্ভবতী নারী, যার প্রসবের সময় মার্চ মাসে, তার স্বামীকে নিয়ে এসে প্রি-টার্ম ডেলিভারির আবেদন করেছেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এমন গর্ভবতী নারীদের মধ্যে বেশিরভাগই আট বা নয় মাসে রয়েছেন।

ডাক্তাররা বলছেন, প্রি-টার্ম সিজারিয়ান শিশু এবং মায়ের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ড. এসজি মুক্কালা, একজন টেক্সাস-ভিত্তিক গাইনোকোলজিস্ট, বলেছেন, “প্রি-টার্ম বার্থ থেকে শিশুদের ফুসফুসের উন্নয়নজনিত সমস্যা, কম ওজন, স্নায়ুবিক জটিলতা, খাওয়ার সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

যদিও ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি কার্যকর হওয়ার কথা, এটি আপাতত আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সিয়াটল-ভিত্তিক মার্কিন জেলা আদালত এই আদেশকে “স্পষ্টতই অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করেছেন এবং ১৪ দিনের জন্য আদেশটি স্থগিত করেছেন।

নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তনের ফলে অনেক পরিবারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রিন কার্ডের জন্য ৬ বছর ধরে অপেক্ষা করা এক ভারতীয় নারী জানান, “আমাদের পরিবারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য এই নাগরিকত্ব পাওয়া ছিল একমাত্র ভরসা। এখন আমরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।”

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব কী?
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া যে কোনো শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্ব পায়। ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে এই নীতির প্রবর্তন হয়।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই আদেশ আমেরিকান ড্রিম অনুসরণকারী অনেক অভিবাসী দম্পতির জন্য চরম অনিশ্চয়তার কারণ হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *